Table of Contents
নামাজ শেষে দোয়া ও ইস্তেগফার
এস্তেগফার ৩ বার এবং দোয়াটি ১বার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর নামায শেষ করে "তিন বার এস্তেগফার করতেন" এবং বলতেন, "আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়ামিনকাসসালামু তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম”।
[মুসলিম, আবু দাউদ]
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনাকারী ওয়ালীদ (রহঃ) বলেন, আমি আওযায়ী (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে এস্তেগফার করতেন? তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ আসতাগফিরুল্লাহ।’
اسْتَغْفِرُ اللهَ [৩ বার]
অর্থঃ আমি আল্লাহ তা’য়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَرَكْتَ يَا ذَالْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তি, তোমার থেকেই শান্তি। হে প্রবল প্রতাপান্বিত ও সম্মানিত, তুমি বরকতময়।
নামায শেষে দোয়া, ইস্তেগফার ও তওবার গুরুত্ব
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের পর্যালোচনায় নামায ইত্যাদি এবাদত সমূহের দ্বারা শুধু সগীরা গোনাহ মাফ হয়ে থাকে; কবীরা গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না। এই জন্য নামায আদায়ের সাথে সাথে মনোযোগ সহকারে তওবা ও ইস্তেগফার করা চাই। ইহা হতে গাফেল হওয়া উচিৎ নয়। অবশ্য আল্লাহ তায়ালা যদি আপন দয়া ও অনুগ্রহে কাহারো কবীরা গোনাহও মাফ করে দেন, তবে ভিন্ন কথা।
ফরয নামাযের পরে সুন্নত থাকলে, তা না পড়ে লম্বা বিরতি দেয়া মাকরূহ।
ইবনে নুমায়ের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নামাযে সালাম ফিরানোর পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ততটুকু সময় বসতেন, “আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাসসালামু তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম” এই দোয়াটা পড়তে যতটুকু সময় লাগে। [মুসলিম]
যে সকল ফরয নামাযের পর সুন্নত নামায আছে, যেমন: যোহর, মাগরিব ও এশা এই সকল ফরয নামাযে সালাম ফিরানোর পর, সুন্নত না পড়ে লম্বা বিরতি দেয়া মাকরূহ। সূতরাং, এই ছোট্ট বিরতিতে পূর্বের পৃষ্ঠায় বর্ণিত এস্তেগফার ও দোয়া কিংবা
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।
এ রকম ছোট যে কোন দোয়াও পড়ে নেয়া যাবে। এরপর, অন্যান্য বড় বড় দোয়া কিংবা ওযীফাগুলো সুন্নত নামায শেষ করে শুরু করতে হবে। কারণ, সুন্নত নামায শেষ না করে বড় বড় দোয়া ও ওযীফায় মশগুল হলে সুন্নত নামাযের সওয়াব হ্রাস পাবে। তবে, যে সকল ফরয নামাযের পরে সুন্নত নেই, যেমন: ফজর ও আসর এসকল ফরয নামায শেষ করে এ অধ্যায়ে বর্ণিত সকল দোয়া এবং ওযীফা এক এক করে পড়ে নেয়া যাবে।
[নূরুল ঈমান (১ম খন্ড)]
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত, আগে ও পরের দোয়া
- ঈদুল ফিতর অর্থ কি | ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম | ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
- প্রতিদিনের শিক্ষামূলক ছোট হাদিস | যে আমলে ১ বছর নফল রোজা ও নামাজের সওয়াব
- জানাজা নামাজের নিয়মাবলী | জানাযার নামাযের পদ্ধতি (হানাফী)
- জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফি দলিল সহ | জানাযার নামাযের পদ্ধতি
- পাচঁ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত |ফজরের নামাজের ফজিলত
নামাজের সালাম ফিরিয়ে কি পড়তে হয়?
- সালাম ফেরানোর পর অনেক দোয়া রয়েছে, যেগুলো পড়া সুন্নত। এখানে একটি দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (সা.) নামাজের সালাম ফেরানোর পর এই দোয়া বলতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯২; তিরমিজি, হাদিস : ২৯৮-২৯৯; আবু দাউদ, হাদিস : ১৫১২)
- দোয়াটি হলো (আরবি)-
- اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
- উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম।
- অর্থ : হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময় এবং তোমার থেকে শান্তি আসে। তুমি কল্যাণময় এবং সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী।
নামায শেষে আল্লাহ তা’য়ালার একত্ববাদ ঘোষণা এবং প্রশংসামূলক দোয়া।
মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) এর কাতিব (সেক্রেটারী) ওয়াররাদ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) আমাকে দিয়ে মুয়াবিয়া (রাঃ)-কে (এ মর্মে) একখানা পত্র লিখালেন যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরয নামাযের পর পাঠ করতেন,
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মা’বুদ নাই। তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নাই। সমগ্র রাজত্ব ও সকল প্রশংসা তাঁরই। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ! আপনি যা দান করেন তা কেউ রুখতে পারে না, আর আপনি যা দান করেন না, তা কেউ দিতে পারে না। আর কোন ধনীর ধন তাকে আপনার পাকড়াও থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
[ বুখারী] [ ভিন্ন ভিন্ন রেওয়ায়েতে উপরোক্ত দোয়াটি মুসলিম, আবু দাউদ এবং নাসাঈ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে]
নামাজ শেষে দোয়া সমূহ কী কী আমাদের জানা উচিত – নিচের প্রশ্ন উত্তর থেকে আমাদের অনেক কিছু জানা হবে –
তারাবির নামাজ শেষে দোয়া ? তারাবির নামাজ শেষে কোন দোয়া পড়তে হয়?
সুবহা-নাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা-ইয়ানা-মু ওয়ালা- ইয়ামুতু আবাদান আবাদা; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুনা-ওয়া রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়াররূহ। ‘ তারাবি নামাজ শেষে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার প্রচলন রয়েছে। অনেকে আবার ব্যক্তিগতভাবে মোনাজাত করে থাকেন।
নামাজ শেষে কি কি পড়তে হয়? নামাজ শেষে মোনাজাত কোনটি? বা নামাজ শেষে মোনাজাতের দোয়া ?
- আল্লাহু আকবার একবার ও ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ তিনবার।(ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪ) অর্থ : আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
- ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবা-রাকতা ইয়া যাল-জালালি ওয়াল ইকরাম’ -১ বার। ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﻭَﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﺗَﺒَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻳَﺎ ﺫَﺍ ﺍﻟْﺠَﻼَﻝِ ﻭَﺍﻟْﺈِﻛْﺮَﺍﻡِ
- অর্থ : হে আল্লাহ্! তুমি শান্তিময়, তোমার কাছ থেকেই শান্তি অবতীর্ণ হয়। তুমি বরকতময়, হে পরাক্রমশালী ও মর্যাদা প্রদানকারী।
- সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন “রাসুল (সাঃ) যখন সালাম ফেরাতেন তখন তিনি তিনবার ইস্তেগফার পড়তে্ন অর্থাত ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন। তারপর বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম”। -মুসলিম ১/২১৮, আবু দাউদ ১/২২১
ফজরের নামাজের শেষে কি দোয়া পড়তে হয়? ফজরের নামাজ শেষে দোয়া
- আবু হুরাইরা রা: রাসুলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এবং ১০০ বার পূর্ণ করার জন্য একবার “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ দাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর” পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জের সমতুল্য হয়। (মুসলিম-১২২৮)।
- আয়াতুল কুরসী (সুরা বাক্বারা আয়াত : ২৫৫) ১ বার। আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে ন ‘। (নাসায়ী, হাদিস সহীহ-হাদিস ৯৭২)
- সুরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস ১ বার করে। (আবু দাঊদ২/৮৬, সহীহ তিরমিযী ১/৮, নাসাঈ ৩/৬৮)
নবীজি প্রতিদিন কোন সূরা পড়তেন?
তিনটি কুল- সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে ঘুমাতে গেলে একটি করে পড়তেন।
প্রতি নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়?
প্রতি নামাজের পর সূরা পাঠ করা নবীজীর সুন্নাহ । ফজরের নামাজের পর সূরা ইয়াসিন পড়তে হবে । আর যোহরের নামাজের পর সূরা ফাতাহ পাঠ করুন। আসরের নামাজের পর সূরা নাবা পড়তে হবে। আর মাগরিবের নামাজের পর সূরা ওয়াকিয়া পড়তে হবে।
শেষ বৈঠকে কি কি পড়তে হয়?
শরিয়তের বিধান মতে নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরুদ শরিফ পড়তে হয়। শেষ বৈঠকে দরুদ শরিফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়া সুন্নাত। কেউ যদি কোনো কারণে সুন্নত ছেড়ে দেয়— তাহলেও তার নামাজ হয়ে যাবে।
কোন সূরা প্রথম মুখস্থ করতে হয়?
সূরা আল-ফাতিহা : এটি কুরআনের প্রথম অধ্যায়, সাতটি আয়াত নিয়ে গঠিত। মুসলমানরা প্রত্যেক ফরজ নামাজে সূরা আল ফাতিহা পাঠ করে। প্রতিদিনের নামাজের সময় ছোট দৈর্ঘ্য এবং নিয়মিত তেলাওয়াত করার কারণে এটি মুখস্ত করার জন্য একটি দুর্দান্ত সূচনা।
কুরআনের সবচেয়ে শক্তিশালী সূরা কোনটি?
হাদিস অনুসারে আয়াতুল কুরসিকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে গণ্য করা হয়। আয়াতটিকে কুরআনের অন্যতম শক্তিশালী হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ যখন এটি পাঠ করা হয়, তখন ঈশ্বরের মহত্ত্ব নিশ্চিত করা হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।