Table of Contents
সুলতান মাহমুদ এবং সোমনাথ মন্দির নিয়ে অপপ্রচারের জবাব
যারা ইতিহাস বিকৃতি করে তারা সেই অনুযায়ী ইতিহাস বিকৃত করে, বিশেষ করে যারা মুসলিম বিরোধী এবং তাদের মনে সাম্প্রদায়িকতা লালন করে। সুলতান মাহমুদ গজনভী একজন অসাধারণ সুলতানের নাম যাকে আমরা গজনবীর সুলতান বলে ডাকি। আজ অনেক মুসলমানও এর ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ, যার ফলশ্রুতিতে আমরা বিকৃত ইতিহাসকে সত্য ইতিহাস বলে আখ্যায়িত করে আসছি। যা খুবই দুঃখজনক।
অনেক বিরোধীরা জোর দিয়ে বলেন যে সুলতান মাহমুদ প্রধানত ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য হিন্দুস্তান আক্রমণ করেননি। পরিবর্তে, তিনি বারবার হিন্দুস্তান আক্রমণ করেছিলেন, মন্দির এবং তাদের মধ্যে থাকা স্বর্ণ ও অন্যান্য সম্পদ ধ্বংস করেছিলেন। তারা এটাও প্রচার করেছিল যে সুলতান মাহমুদ প্রচণ্ড হিন্দু বিরোধী ছিলেন। সেজন্য তিনি নির্বিচারে হিন্দুদের হত্যা করেছেন।
সুলতান মাহমুদ কেন ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেছিল?
সুলতান মাহমুদ মোট সতেরবার হিন্দুস্তানে আক্রমণ করেছিলেন। মাত্র একটি অভিযান তিনি সোমনাথ মন্দিরে পরিচালনা করেছিলেন। শুধুমাত্র তিনি সোমনাথ ধ্বংস করেছিলেন। এছাড়া আর কোনো অভিযানে মন্দির ধ্বংস করার ইতিহাস নেই। সুলতান মাহমুদ যদি সম্পদের লোভে ভারতবর্ষে আক্রমণ করতেন, তাহলে তো একটি মন্দিরও রক্ষা পাওয়ার কথা না। কারণ সুলতান মাহমুদের তরবারিকে আটকানোর ক্ষমতা সে সময়ে হিন্দুস্তানের কারোরই ছিলো না।
হিন্দুদের হত্যা করা যদি সুলতান মাহমুদের উদ্দেশ্য হত, তাহলে আজ এত হিন্দু ভারতে থাকতো না । ৪৭ এ দিল্লিতে, এরপরে গুজরাটে, আসামে উগ্র হিন্দুরা যেভাবে মুসলমানদের নির্মমভাবে হত্যায় মেতে উঠেছিলেন, সুলতান মাহমুদ তার সৈন্যদের হিন্দুদের হত্যার আদেশ দিলে হিন্দুরা হিন্দুস্তানে থাকতে পারতেন না।
সুলতান মাহমুদ যুদ্ধে অংশ নেননি এমন কোনও হিন্দুকে হত্যা করেননি । তবে তারপরেও তারা সুলতান মাহমুদকে একটি মন্দির ধ্বংসীকারী হিসাবে প্রমাণ করার পাশাপাশি মিথ্যা মিশ্রণ এবং ইতিহাসকে বিকৃত করে মিথ্যাচার করে।
তবে কেন তিনি সোমনাথ মন্দিরে আক্রমণ করেছিলেন এবং তা দখল করেছিলেন? সুলতান মাহমুদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মন্দিরের সম্পদ দখল করা?
হিন্দুস্তানে সুলতান মাহমুদের বিজিত এলাকায় হাজার হাজার মন্দির ছিল, সেগুলো তিনি ধ্বংস করেননি। এমনকি হিন্দুদের উপাসনালয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে বাধাপ্রদানও করা হয়নি। এজন্য আমাদের ইতিহাসের শিকড়ে পৌঁছতে হবে। কেন সুলতান মাহমুদ গজনবি রহ. সোমনাথ মন্দিরে আক্রমণ করে সেটাকে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন? আসুন দেখি প্রখ্যত মুসলিম ঐতিহাসিক আলতামাশ কী বলেন?
হিন্দু ধর্মের কুসংস্কারের মাঝে সে সময় একটি কুসংস্কার ছিল ভগবানের সন্তুষ্টি লাভের জন্য তারা কুমারি মেয়েকে দেবতার সামনে ধর্ষণ করে বলি দিত। সে সময়ে সোমনাথের পুরোহিতরা একটি মুসলিম মেয়েকে ধর্ষণ করে বলি দেয়ার চেষ্টা করে। মুসলিম মেয়েটি নিজের সতীত্ব রক্ষা করার জন্য মন্দিরের কুপে আত্মহত্যা করে। সুলতান মাহমুদ তখন গজনীতে।
হযরত হামযা এবং হযরত ওমর (রা) এর ইসলাম গ্রহন
যখন তার কাছে এ সংবাদ পৌঁছলো, নিজের বোনের হত্যার প্রতিশোধ নিতে তার রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠে! দাদারা, তোমরা তোমাদের ধর্মীয় প্রথা পালন কর। সমস্যা নেই। তোমাদের মেয়েদের ইচ্ছেমত ধর্ষণ করে মন্দিরে বলি দাও। সুলতান মাহমুদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু তোমাদের প্রথা পালনের জন্য কেন মুসলিম মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করতে গেলে? দোষটা তোমাদের?নাকি সুলতান মাহমুদের?
আমাদের বোনদের ধর্ষণ করে হত্যা করে তোমরা তোমাদের ধর্মীয় প্রথা পালনের চেষ্টা করবে? সুলতান মাহমুদ এ অন্যায় ও অপমান সহ্য করতে পারেননি। কারও পারারও কথা না। অসহায় বোনের খবর পেয়ে তিনি গজনী থেকে শত শত মাইল সফর করে এসে সোমনাথ মন্দিরে আক্রমণ করেন এবং সে মন্দির ধ্বংস করে দেন।
- আমি চাঁদকে বলি তুমি সুন্দর নও লিরিক্স | Ami Chad Ke Boli Tumi Sundor Nou Lyrics |
- নামাজকে বলো না কাজ আছে লিরিক্স | Namaj k bolo na kaj ace Lyrics | বাংলা লিরিক
- আল্লাহ, ওগো আল্লাহ ক্ষমা করে দেও লিরিক্স | Ogo Allah ogo Allah Khoma Kore Daw Lyrics | বাংলা লিরিক গজল
- মা ফাতেমার নয়নমনি, হযরত আলীর জান লিরিক্স | Ma Fatemar Noyonmoni Gojol Lyrics | বাংলা লিরিক গজল
- নবীর রওজা শরীফ দেখে মন ভরে না লিরিক্স | Nobir Rowja Sharif Deke Mon Vore Na Lyrics | বাংলা লিরিক গজল
দাদারা, আপনাদের কাছে একটি ছোট প্রশ্ন করি এবার! মনে করুন বর্তমানে দিল্লীর কোনো মসজিদে হিন্দুদের কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করে বলি দেয়ার চেষ্টা করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আপনাদের আচরণ কী হবে? আপনারা তো এমনিতে কত মসজিদ শহীদ করেছেন?
আপনাদের মত ঘৃণ্য কোনো কাজ যদি মুসলিমরা করত, তাহলে বলেন, কত মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত হত আপনার হাত? কত মসজিদ শহীদ হত?
মোটকথা হলো সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দিরে অভিযান মন্দির ধ্বংস করা বা মন্দিরের মালামাল লুট করার জন্য নয়। বরং নির্যাতিতা এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত মেয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। যুদ্ধে তিনি বিজয় লাভ করেছেন।
যুদ্ধের চিরাচরিত নিয়ম হলো বিজেতারা গনিমত হিসাবে সম্পদ নিয়ে যায়। সুলতান মাহমুদ গজনবি রহ. সোমনাথ মন্দিরের যে সম্পদ নিয়েছিলেন সেটা গনিমত হিসেবে নিয়েছেন। যুদ্ধনীতি হিসেবে সেটা কখনোই নিন্দনীয় নয়।
সোমনাথ মন্দিরে আক্রমণের আরেকটি মত আছে সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দিরের অভিযানের ব্যাপারে। আর তা হল সোমনাথ মন্দিরের মূর্তিটি সব সময় শূন্যে ঝুলে থাকত বলে প্রচার ছিল। এটি তৌহিদে বিশ্বাসী সুলতান মাহমুদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হত। তাই সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দির আক্রমণের সময় গজনী থেকে সাথে করে প্রকৌশলী, ধাতুবিদ নিয়ে আসেন। তারা মূর্তি পরীক্ষা করে দেখেন সোমনাথ মন্দিরের মূর্তিটি লোহার তৈরি এবং সোমনাথ মন্দিরের চারিদিকের দেয়ালের পাথরে চৌম্বক লাগানো রয়েছে।
এটা জানার পর যখন সোমনাথ মন্দিরের দেয়ালের পাথর খুলে নেয়া হল তখনই লোহার তৈরি সোমনাথ মন্দিরের মূর্তি মাটিতে পড়ে গেল এবং প্রমাাণিত হল, শূন্যে ঝুলে থাকার জন্য এই মূর্তির নিজস্ব কোনো ক্ষমতা ছিল না। তাই রাজ্য বিস্তারের জন্য নয় সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দির আক্রমণ করেছিলেন এ মন্দিরের প্রতি তৎকালীন হিন্দুদের মিথ্যা ও গোড়া বিশ্বাস যা হিন্দুদের বিশেষ শক্তি প্রদান করত, তা নষ্ট করার জন্য।
তবে বেশির ভাগ ঐতিহাসিকদের ধারণা সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দির ধ্বংস করেননি। সুলতান মাহমুদ শুধুমাত্র সোমনাথ মন্দিরের ২০০ মন স্বর্ণ তার নিজ দেশ গজনীতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দিরের কোনো বিগ্রহও ধ্বংস করেন নি, সোমনাথ মন্দিরের ভেতরে যেসব ব্রাক্ষণরা পূজা অর্জনা করত সুলতান মাহমুদ তাদেরকে হত্যাও করেননি।
সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দিরের অভিযানের পর যথারীতি আবার হিন্দুরা সোমনাথ মন্দিরের ভেতরে তাদের পূজা অর্চনা শুরু করে। সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দিরকে কোন মসজিদেও রূপান্তরিত করেন নি।
আর সুলতান মাহমুদের পরেও সোমনাথ মন্দিরে সুলতান আলউদ্দিন খলজি, গুজরাটের বিভিন্ন স্থানীয় শাসক আর বাদশাহ আওরঙ্গজেবও অভিযান চালিয়েছিলেন। মুসলমানরা যদি সোমনাথ মন্দিরকে ভেঙ্গে মসজিদই তৈরি করে ফেলত তাইলে তো আর বারবার সোমনাথ মন্দির আক্রমণ করার কোন দরকার ছিল না। সোমনাথ মন্দির মন্দির থাকার কারণেই মুসলমানরা এগুলি বারবার আক্রমণ করত।
প্রশ্ন হতে পারে, এত মন্দির থাকতে মুসলমানরা খালি সোমনাথ মন্দির বারবার আক্রমণ করত কেন? এর কারণ হচ্ছে সোমনাথ মন্দিরের ভেতরে পূজা অর্চনার বদলে দেশীয় রাজারা শলা পরামর্শ করত কিভাবে মুসলমান সুলতানদের পরাজিত করা যায়। আর সোমনাথ মন্দিরের ভেতরে হিন্দু রাজারা তাদের সোনা দানা লুকিয়ে রাখত। মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণেই এই সোমনাথ মন্দির কাশীনাথ মন্দির বারবার মুসলমানদের আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে দিল্লী থেকে শুরু করে ভারতের অন্যান্য এলাকার বড় বড় মন্দির কখনোই মুসলমানদের আক্রমণের শিকার হয় নি।
অথচ দেখুন এর বিপরীতে হিন্দুরা মুসলিমদের সাথে কী করল? বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর হিন্দুরা সেইখানে রাম মন্দির স্থাপন করল। আমরা মুসলমানরা বাবরি মসজিদের যেই জায়গায় নামাজ পড়তাম ঠিক সেই মেহরাবের উপরে হিন্দুরা এখন তাদের রামের মূর্তি স্থাপন করেছে।
১৯৯২ সালের ১২ ডিসেম্বরের পর থেকে আজ ২১ বছর হল মুসলমানরা আর বাবরি মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজও পড়তে পারিনি। বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার সময় যেসব মুসলমান হিন্দুদের বাধা দিতে এসেছিল হিন্দুরা তাদের প্রত্যেককেই হত্যা করে। এমনকি বাবরি মসজিদের আশপাশে মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে হিন্দুরা গিয়ে মুসলিম বোনদের ধর্ষণ করে।
এর বিপরীতে আমরা সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দিরের অভিযানে কী দেখতে পাই? সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দিরের অভিযানের পর সোমনাথ মন্দিরের অবস্থিত হিন্দুদের কোন বিগ্রও ধ্বংস করেননি, সোমনাথ মন্দিরের পূজা অর্জনায় লিপ্ত কোন ব্রাক্ষণকেও হত্যা করেন নি, এবং সর্বোপরী সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দিরকে মন্দির হিসেবেই রেখেছিলেন উনি সোমনাথ মন্দিরকে কখনই মসজিদে রূপান্তরিত করেন নি। তাহলে হিন্দুদের বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার সাথে অবশ্যই সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দির অভিযানকে এক করা ঠিক নয়।
- ও মদিনার বুলবুলি লিরিক্স | O Madinar Bulbuli Lyrics | বাংলা লিরিক গজল
- হৃদয় মাঝে মালা গাঁথি ছন্দে আর গানে লিরিক্স
- রহমত আলম নবী নূরে মুজাচ্ছাম লিরিক্স | Rahmote Alom Nure Mujassom Lyrics |
- আমার মনের ঘরেতে রেখেছি যারে লিরিক্স | Moner Ghor Lyrics |
সুলতান মাহমুদ একটানা ১৫ বার অভিযান করে ভারতের বহু দেশীয় রাজাকে পরাজিত করেন। সেই সময় সুলতান মাহমুদকে সবাই একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি ভাবত। সোমনাথ মন্দিরের বিগ্রহের খ্যাতি ছিল সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে। সোমনাথ মন্দিরের ব্রাক্ষণরা বলতো শূন্যে ঝুলন্ত বিগ্রহের অসীম অলৌকিক ক্ষমতার বলে সুলতান মাহমুদের পক্ষে কখনই সোমনাথ মন্দির জয় করা সম্ভব হবে না।
মূলত সোমনাথ মন্দিরের ব্রাক্ষণ পুরাহিতরাই সুলতান মাহমুদকে সোমনাথ মন্দির আক্রমণ করার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল। সোমনাথ মন্দির সে সময় হিন্দুদের রাজনৈতিক তীর্থক্ষেত্র ছিল। সোমনাথ মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য ভারতীয় হিন্দু রাজন্যবর্গ দশ হাজার গ্রাম মন্দিরের সম্পত্তিরূপে দান করেন।
সোমনাথ মন্দিরের পূজা-পার্বন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি পালনের জন্য এক সহস্র ব্রাহ্মণ নিয়োজিত ছিল মন্দিরে। সর্বদা সোমনাথ মন্দিরের দেবতার সন্তুষ্টির জন্য পাঁচশ’ নর্তকী এবং দুশ’ গায়িকা নৃত্য-গীত করতো। ভারতবর্ষের হিন্দু রাজাগণ তাদের কুমারী কন্যাদের এ মন্দিরের দেবতার সেবার জন্য উৎসর্গ করে কৃতার্থ হতেন। সে সময় হিন্দুরা তাদের ধন সম্পদ সোমনাথ মন্দিরে জমা রাখতেন অর্থাৎ সোমনাথ মন্দিরের ভেতরে অসংখ্য ধন-সম্পদ সঞ্চিত আছে, এ তথ্য জানতে পেরেই সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দির জয়ে প্রলুব্ধ হন।
হিন্দুরা অভিযোগ করে সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দির ধ্বংস করে সেখানে একটা মসজিদ তৈরি করে ছিলেন। সোমনাথ মন্দিরের পাশে যে মসজিদটা ছিল এটা সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দির অভিযানের ২০০ বছর আগেই তৈরি হয়েছিল।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের বহু আগে থেকেই আরব বণিকরা গুজরাটে ব্যবসা বাণিজ্য করতে আসত। সে ইসলামের শুরু থেকেই গুজরাটের মুসলমানদের আগমন শুরু হয়। গুজারটের স্থানীয় হিন্দু শাসকরাই মুসলমানদের সোমনাথ মন্দিরের অনতিদূরে একটি মসজিদ তৈরি করার অনুমতি দেয়। এটা আমার কথা না একটা হিন্দু ধর্ম ভিত্তিক ওয়েবসাইটেই তা বলা আছে।
সুলতান মাহমুদ খাইবার গিরিপথ অতিক্রম করে ভারতে আসেন। গজনী থেকে ৪২ দিনে হাজার মাইল পথ হেঁটে ১০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি সুলতান মাহমুদ পৌঁছলেন সোমনাথের মন্দিরের অনতিদূরে। সুলতান মাহমুদ যদি পৌত্তলিকদের বিরোধী হতেন তাহলে গজনী থেকে গুজরাট আসার পথে তো রাস্তায় অনেক মন্দিরই পড়েছিল, সেগুলো নিশ্চয়ই সুলতান মাহমুদ আস্ত রাখতেন না।
সুলতান মাহমুদের সেনাবাহিনীর মাঝে ১২ জন ছিল হিন্দু সেনাধ্যক্ষ। এর মধ্যে দুইজন সেনাধ্যক্ষ ছিল ব্রাক্ষণ। আর বাকিরা ছিল ক্ষত্রিয়। সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দির অভিযানে যারা অংশ নিয়েছিল তাদের অর্ধেকই ছিল হিন্দু। সোমনাথ মন্দির থেকে যে ২০০ মন স্বর্ণ উদ্ধার হয়েছিল সেই সব স্বর্ণ সুলতান মাহমুদ নিজের কাছে রাখেননি বরং তার সেনাবাহিনীর মাঝে ভাগ করে দিয়েছেন।
- আল্লাহ আমার রব এই রবই আমার সব লিরিক্স
- কুরআন মধুর বাণী, আমি যখনই শুনি লিরিক্স | Kuran Modur Bani Lyrics | বাংলা লিরিক গজল
- ১৫০ টি সেরা ইসলামিক উক্তি বা ইসলামী বানী [Top 150 Islamic Quotes in Bangla]
- কুরআন হাদিসের আলোকে বান্দার হককের গুরুত্ব
যেসব হিন্দু সেনাপতি ও হিন্দু সৈনিকরাও সোমনাথ মন্দিরের অভিযানে অংশ নিয়েছিল তারাও সেই ২০০ মন স্বর্ণের ভাগ পেয়েছিল। ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন, সোমনাথ মন্দিরের অভিযানে অংশ নেওয়া প্রত্যেকটা সৈনিককে সেদিন সুলতান মাহমুদ ৫০ হাজার করে দিনার দিয়েছিলেন। সোমনাথ মন্দিরের অভিযানে হিন্দু সৈনিকরাও অংশ নেবে আর দোষ হবে খালি সুলতান মাহমুদের এটা কেমন বিচার!
যদি শুধুমাত্র ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণেই মুসলমানরা সোমনাথ মন্দির আর কাশীনাথ মন্দির আক্রমণ করত তাইলে তো মুসলমানদের ৮০০ বছরের ইতিহাসে আর একটা হিন্দুও বেঁচে থাকত না। আর মুসলমান সুলতানরা যে অনেক বড় বড় মন্দিরে অর্থ সাহায্য দিত তা উইকিপিডিয়ার বিভিন্ন মন্দিরের লিংকেই বলা আছে।
৪৭ এর পর গুজরাট কাশ্মীরের মুসলমানদের উপর হিন্দুরা যেরকম গণহত্যা চালিয়েছিল ভারতের মুসলমানদের ৮০০ বছরের শাসনামলে হিন্দুদের উপর মুসলমানরা এমন গণহত্যা তো দূরের কথা যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া একটা হিন্দুকেও আঘাত করা হয়নি। শত শত প্রাচীন মন্দির ভারতের মুসলিম শাসনামলে অক্ষুণ্য ছিল।
সুলতান মাহমুদের ভারত বিজয়ের পর পরাজিত ভারতের রাজাগণ কর্তৃক তার সাথে সম্পাদিত চুক্তি বারবার ভঙ্গ করার কারণে, তাকে বারবার ভারত অভিযান চালাতে হয়েছিল। আর মধ্যযুগে এ ধরনের রাজ্য বিস্তার বল্লল সেন, লক্ষণ সেন, গোপাল, ধর্মপাল সবাই করেছিলেন। বলা যায়, এগুলো ছিল সে সময়ের রীতি।
সুলতান মাহমুদকে হিন্দুরা সব সময় হিন্দু বিদ্বেষী বলে প্রমাণ করতে চায়। সুলতান মাহমুদ মোট ১৭ বার ভারত অভিযানের পর তার প্রত্যেক অভিযানেই ভারতের বিভিন্ন দেশীয় রাজা যেমন জয়পাল, আনন্দপাল, সুখপালকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। সে সময়ের মধ্যযুগীয় নীতি অনুসারে সুলতান মাহমুদ চাইলেই পারতেন পরাজিত সকল দেশীয় হিন্দু রাজাকে হত্যা করতে। কিন্তু সুলতান মাহমুদ তার সাথে যুদ্ধে পরাজিত একজন দেশীয় হিন্দু রাজাকেও হত্যা করেননি।
সুলতান মাহমুদ যে কোনো হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন না এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল কনৌজের রাজা রাজ্যপাল সুলতান মাহমুদের আনুগত্য স্বীকার করলে অন্যান্য পরাক্রমশালী হিন্দু রাজপুত রাজাগণ অপমানিত বোধ করেন।
কালিঞ্জরের চান্দেলা রাজা গোয়ালিয়রের রাজপুত রাজার সাথে জোটবদ্ধ হয়ে সুলতান মাহমুদের মিত্র কনৌজের রাজা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে এবং সকল রাজপুত রাজা মিলে কনৌজের রাজা রাজ্যপালকে হত্যা করে। এরপর সুলতান মাহমুদ তার বন্ধু হিন্দু রাজা রাজ্যপালের হত্যার প্রতিশোধকল্পে ১০১৯ খ্রিস্টাব্দে চান্দেলার রাজা গোন্তার বিরুদ্ধে সমরাভিযান পরিচালনা করেন। চান্দেলা রাজা গোন্তা সুলতান মাহমুদের বাহিনীর প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেন। পরবর্তীতে সুলতান মাহমুদ কনৌজের রাজা রাজ্যপালের ছেলেকে কনৌজ ও চান্দেলা উভয় রাজ্যের রাজা বানান।
সুলতান মাহমুদের ভারত বর্ষের ১৩ তম অভিযান শুধুমাত্র তার বন্ধু কনৌজের রাজা রাজ্যপালের হত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্যই হয়েছিল। সুলতান মাহমুদ যদি সত্যিই হিন্দু বিদ্বেষী হতেন তাহালে কনৌজের রাজা রাজ্যপালের হত্যার প্রতিশোধ কেন নিতে গেলেন, মাথা খোলাসা করে একটু ভাবতে বসুনতো।
সুলতান মাহমুদের ভারত বর্ষের এই ১৭ বার সফল অভিযানের পরেও সুলতান মাহমুদ যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া ভারতের কোনো হিন্দুকেও হত্যা করেননি বা কোনো হিন্দুকে দাস দাসী বানিয়ে গজনীতেও নিয়ে যান নি। আর সুলতান মাহমুদ চাইলেও তা করতে পারতেন না। কারণ ইসলামি শরিয়তে মুসলমানরা যখন কোন দেশ জয় করে তখন খলিফা অথবা মুসলিম সুলতান সেই দেশের পরাজিত বিধর্মী নাগরিকদের জিম্মী ঘোষণা করেন। আর জিম্মীদের সম্মান নিরাপত্তা দেয়ার সার্বিক দায়িত্ব পরে সুলতান অথবা খলিফার উপর।
জিম্মী, পরাজিত বিধর্মী নাগরিকদের অভিভাবকও সুলতান অথবা খলিফা হন। আর যুদ্ধের পর কোন জিম্মীকে হত্যা করা বা দাস দাসী বানানো ইসলামি শরিয়তে হারাম।
হযরত ওমর রা. এর সময়ে মুসলমানরা সিরিয়া, ইরাক, ইরান/পূর্ব নাম পারস্য, তুরস্ক, সাইপ্রাস এত দেশ জয় করেছিলেন। কোনো দেশের নাগরিককে সাহাবীরা দাস দাসীতে রূপান্তরিত করেন নি। উল্টো ওই সব দেশের আগে থেকে থাকা সাহাবীরা সব দাস দাসীকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
মুলমানরা যে হিন্দুদের প্রতি কতটুকু সহনশীল তার একটা জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ দেই। ভারত বর্ষে মুসলমানদের সাথে সবচেয়ে বেশি যুদ্ধ হয়েছে রাজপুত হিন্দুদের। কিন্তু রাজপুত হিন্দুরা প্রায় প্রতি যুদ্ধেই মুসলমানদের কাছে পরাজিত হয়ে সন্ধি করত। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই রাজপুত হিন্দুরা তাদের ক্ষত্রিয় স্বভাবের কারণে মুসলমানদের সাথে করা তাদের সন্ধি চুক্তিটি ভংগ করত।
এরপর আবার মুসলমানরা যুদ্ধ করে রাজপুতদের পরাজিত করত। সেই সময় মধ্যযুগীয় রীতি অনুসারে এটা খুব স্বাভাবিক ছিল যে বারবার সন্ধি চুক্তি ভংগ করার কারণে পুরা রাজপুত জাতিটাকেই ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু মুসলমানরা তা করে নি। মুসলমান সুলতানরা বারবার হিন্দু রাজপুত যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বারবার সন্ধি চুক্তি ভংগ করার কারণে মধ্যযুগীয় রীতি অনুসারে এটা খুবই স্বাভাবিক ছিল যে পুরা রাজপুত জাতিটাকেই মুসলমানদের কর্তৃক ধ্বংস করতে পারতো। রাজপুত জাতিটা কিন্তু এখনো ভারত বর্ষে বহাল তবিয়তে আছে।
(তথ্যসূত্র: চেপে রাখা ইতিহাস, লেখক সৈয়দ গোলাম আহমদ মোর্তজা, মদীনা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত এবং আমার ব্লগ. কম)
সুত্র: আওয়ার ইসলাম, লেখক – রেজাউল করীম