Table of Contents
ইসলামে চুরি ও চোরের শাস্তি
ইসলাম মানুষের পার্থিব জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। অনৈতিকভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে ইসলাম।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের সামান্য অংশও জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিও না।’ (সুরা বাকারা : ১৮৮)
কেউ যেন অন্যের ধন-সম্পদ চুরি করার সাহস না পায় এজন্য ইসলামে চোরের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যের মাল হেফাজতকৃত ও সংরক্ষিত স্থান থেকে বিনা অনুমতিতে গোপনে নিয়ে যাওয়াকে ইসলামের পরিভাষায় চুরি বলা হয়।
চোরের জন্য ইসলামে হাতকাটার শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের শাস্তি হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা মায়িদা : ৩৮)
কারোর ব্যাপারে তার নিজস্ব স্বীকারোক্তি অথবা গ্রহণযোগ্য যে কোন দু’ জন সাক্ষীর মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তি প্রমাণিত হয়ে গেলে অথচ চোরা বস্ত্তটি যথাযোগ্য হিফাযতে ছিলো এবং বস্ত্তটি তার মালিকানাধীন হওয়ার ব্যাপারে তার কোন সন্দেহ ছিলো না এমনকি বস্ত্তটি সোয়া চার গ্রাম স্বর্ণ অথবা পৌনে তিন গ্রাম রূপা সমমূল্য কিংবা এর চাইতেও বেশি ছিলো তখন তার ডান হাত কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলা হবে, আবার চুরি করলে তার বাম পা, আবার চুরি করলে তার বাম হাত এবং আবার চুরি করলে তার ডান পা কেটে ফেলা হবে। সুত্র – হাদিস বিডি
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْا أَيْدِيَهُمَا جَـزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِ، وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ»
‘‘তোমরা চোর ও চুন্নির (ডান) হাত কেটে দিবে তাদের কৃতকর্মের (চৌর্যবৃত্তি) দরুন আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে শাস্তি সরূপ। বস্তত আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় ক্ষমতাবান মহান প্রজ্ঞাময়’’। (মায়িদাহ্ : ৩৮)
‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تُقْطَعُ يَدُ السَّارِقِ إِلاَّ فِيْ رُبْعِ دِيْنَارٍ فَصَاعِدًا.
‘‘সিকি দিনার তথা এক গ্রাম থেকে একটু বেশি স্বর্ণ (অথবা উহার সমমূল্য) এবং এর চাইতে বেশি চুরি করলেই কোন চোরের হাত কাটা হয়। নতুবা নয়’’।
(বুখারী ৬৭৮৯, ৬৭৯০, ৬৭৯১; মুসলিম ১৬৮৪; তিরমিযী ১৪৪৫; আবূ দাউদ ৪৩৮৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৩৪)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
قَطَعَ رَسُوْلُ اللهِ يَدَ سَارِقٍ فِيْ مِجَنِّ ثَمَنُهُ ثَلَاثَةُ دَرَاهِمَ.
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক চোরের হাত কাটলেন একটি ঢাল চুরির জন্য যার মূল্য ছিলো তিন দিরহাম তথা প্রায় নয় গ্রাম রূপা কিংবা উহার সমমূল্য’’।
(বুখারী ৬৭৯৫, ৬৭৯৬, ৬৭৯৭, ৬৭৯৮; মুসলিম ১৬৮৬; তিরমিযী ১৪৪৬; আবূ দাউদ ৪৩৮৫, ৪৩৮৬; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৩৩)
চুরি করলে কখন হাত কেটে দেওয়া যাবে ? শরীয়ত কি বলে ?
তবে চুরি করলেই ইসলামে হাত কেটে দেওয়ার বিধান দেওয়া হয়নি, বরং হাত কাটার শাস্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে।
- প্রথমত, চুরি হয়ে যাওয়া জিনিসটি অন্যের মালিকানাধীন হতে হবে। তাতে চোরের ন্যূনতম মালিকানা ও মালিকানার সন্দেহও থাকতে পারবে না। এবং মালটি এমন বস্তু হতে পারবে না, যাতে জনগণের সমান অধিকার রয়েছে।
- দ্বিতীয়ত, চুরি হয়ে যাওয়া জিনিসটি সংরক্ষিত ও হেফাজতের জায়গায় থাকতে হবে। অরক্ষিত স্থান থেকে কোনো জিনিস চুরি হলে তার জন্য হাত কাটা যাবে না।
- তৃতীয়ত, মালটি বিনা অনুমতিতে নিতে হবে। যে মাল নেওয়ার বা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়, সে যদি তা একেবারেই নিয়ে যায়, তাহলে চুরির ‘হদ’ জারি হবে না।
চতুর্থত, মালটি গোপনে নিতে হবে। কেননা অন্যের মাল প্রকাশ্যে নিলে তা চুরি নয়, ডাকাতি।
পঞ্চমত, তার চুরির ব্যাপারটি সব ধরনের সংশয়হীন ও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হতে হবে। উপরোক্ত শর্ত পাওয়া না গেলে সমকালীন বিচারকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে শাস্তি দেওয়া হবে, কিন্তু তার হাত কাটা যাবে না।
ইসলামে চুরির শাস্তি প্রদানে ধনী ও গরিবের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবার জন্য একই ধরনের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।
হজরত আয়েশা (রা.) একটি ঘটনা বর্ণনা করেন, ‘মাখজুম গোত্রের একজন নারীর চুরির ঘটনা কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলল। এ অবস্থায় তারা বলাবলি করতে লাগল, এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে কে আলাপ করতে পারে?
তারা বলল, একমাত্র রাসুল (সা.)-এর প্রিয় পুত্র উসামা বিন জায়েদ (রা.) এ ব্যাপারে আলোচনা করার সাহস করতে পারেন। উসামা (রা.) নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে কথা বললেন।
- সুদ বা অবৈধ পন্থায় আয় করা টাকা দিয়ে মসজিদ মাদরাসায় দান করলে ঐ দানের সাওয়াব পাওয়া যাবে কিনা?
- রমজানের ৩০ দিনের দোয়া যা আমাদের অজানা ! রমজানের দোয়া
- রিযিক বৃদ্ধির দোয়া বা অভাব দূর করার দোয়া | Islamic Post
নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘনকারিণীর সাজা মাওকুফের সুপারিশ করছ?
অতঃপর নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন, ‘তোমাদের আগের জাতিগুলোকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোনো বিশিষ্ট লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অন্য়-গরিব সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম, যদি মোহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা ফাতিমা চুরি করত তা হলে আমি অবশ্যই তাঁর হাত কেটে দিতাম।’ (বুখারি : ৩৪৭৫)
- জানাজা নামাজের নিয়মাবলী | জানাযার নামাযের পদ্ধতি (হানাফী)
- পাচঁ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত |ফজরের নামাজের ফজিলত
- স্বামী স্ত্রী সহবাসের দোয়া ও নিয়ম