শিশুশ্রম রচনা | বাংলা ২য় পত্র

0
165
মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা
মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা
Advertisements
5/5 - (1 vote)

শিশুশ্রম রচনা | বাংলা ২য় পত্র

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আশা করি তোমরা ভাল আছো । তো আজকে তোমাদের জন্য নিয়ে এলাম শিশুশ্রম রচনা। এই রচনা তোমরা যারা পরীক্ষার্থী তাদের অনেক কাজে লাগবে । তো তোমাদের ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে Facebook messenger, WhatsappTelegram, Instagram এবং IMO তে শেয়ার করতে পারো ।

শিশুশ্রম রচনা | বাংলা ২য় পত্র
শিশুশ্রম রচনা

 

শিশুশ্রম রচনা

ভূমিকা :

ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে,
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।

শিশুরাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। আজকের শিশু একদিন বড় হয়ে সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সে জন্য শিশুকে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যোগ্য নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। উন্নত বিশ্বে তাই শিশুদের কল্যাণ ও বিকাশের জন্য নানারকম পরিচর্যার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের কারণে অধিকাংশ শিশুরই উপযুক্ত কোনো পরিচর্যা করা হয় না। বরং জীবনের শুরুতে তাদের বের হতে হয় জীবিকার খোঁজে। নিয়োজিত হতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে। শিশুশ্রম তাই এ দেশে খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। অথচ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুদের সর্বনাশা ভবিষ্যৎ পরিণামের কথা কেউ ভাবেন না।

Advertisements

শিশুশ্রমের প্রকৃতি: অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের খুব ছোটবেলা থেকেই উপার্জনের দিকে মনোযোগ দিতে হয়। জীবিকার তাগিদ এমনই যে, ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য তাদের যেতে হয় কাজের সন্ধানে। দরিদ্র পরিবারে অধিক ছেলেমেয়ে হওয়ার কারণে অসচ্ছল বাবা-মা তাদের সন্তানদের ঠিকমতো খাবার- দাবার দিতে পারে না। পিতামাতার আর্থিক দুরবস্থার কারণে শিশুরা অল্পবয়সেই শ্রমদানে বাধ্য হয়। যে- কোনো কাজে যৎসামান্য মজুরিতে নিয়োজিত হয়ে শিশুরা শ্রম দেয়। শিশুশ্রমের ক্ষেত্র বেশ প্রসারিত।

বাসাবাড়ির কাজ, হোটেলে ধোয়ামোছার কাজ, গ্যারেজে গাড়ি মেরামত, গ্যাস ওয়েল্ডিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, নালা-নর্দমায় টোকাইর কাজ, ইট ভাঙা, পাথর ভাঙা থেকে শুরু করে হেন কাজ নেই যা শিশুদের দ্বারা করানো হয় না। একধরনের অসৎ লোক আছে, যারা নানা কায়দায় শিশুদের অপহরণ করে বিদেশে পাচার করে দেয়। বিদেশে সেই শিশুদের উটের জকিসহ নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার জন্যই শিশুরা শ্রমসাধ্য কাজে নিয়োজিত হয়।

শিশুশ্রম ও আন্তর্জাতিক আইন বিশ্বের প্রতিটি দেশেই শিশু-অধিকার একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। জাতিসংঘ সনদে শিশু-অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও এই সনদে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। তাই রাষ্ট্র দেশের শিশুদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। শিশু অধিকারের আওতায় আঠারো বছরের নিচ পর্যন্ত বয়সী সকলকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

শিশু অধিকার আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে: ‘ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, অর্থনৈতিকভাবে শোষণ শিশুদের অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। শিশুর সামাজিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করবে যেসব, সেসব বিপদ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হবে (ধারা ৩২)। শিশুদের সকল প্রকার হয়রানি, নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে হবে (ধারা ৩৪)। শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে (ধারা ২৮)।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য দীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন-

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

এ কথার বাস্তবায়ন আজো সম্ভব হয়নি। বিশ্বের নানা জায়গায় চলছে যুদ্ধ। আর এসব যুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। শিশুর পাঁচটি মৌলিক অধিকার শুধু ঘোষণাপুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ে উঠছে অমানবিকতায়। অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে আমাদের দেশের হাজার হাজার শিশু। শিশুশ্রম বন্ধকরণে কতিপয় পদক্ষেপ এ দেশে জনসংখ্যার প্রায় ৪৪% দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। পরিবারের আর্থিক চাপে শিশুরা শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে। দরিদ্র পরিবারে অধিক জন্মের হার শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশ সরকার শিশুশ্রম প্রতিরোধে সীমিত আকারে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন:

১. শিশুদের জন্য শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রণয়ন।
২. মেয়েদের জন্য এসএসসি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা প্রবর্তন।
৩. বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা এবং বিনামূল্যে শিক্ষাসামগ্রী প্রদান।
৪. উপবৃত্তি কার্যক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
৫. পোশাকশিল্পের শিশুশ্রমিকদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।
সরকারের এসব নীতিমালার পাশে আরো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন:
১. সরকারের পাশাপাশি NGO গুলো প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। এই ব্যবস্থায় পথশিশু ও অবহেলিত শিশুদের সম্পৃক্ত করা উচিত।
২. কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটাতেও কারিগরি শিক্ষাকে বিশেষ মর্যাদা দিতে হবে।
৩. শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের শিশু মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা উচিত।
৪. শিশুশ্রমের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। এর জন্য সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমকে কাজে লাগাতে হবে।                                                                                                                                        ৫. শিশুপাচার কঠোর হস্তে রোধ করতে হবে। শিশু পাচারকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
৬. দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে দরিদ্র শিশুদের সম্পৃক্ত করা যায় কিনা, ভেবে দেখতে হবে। এদের সাহায্যের জন্য অন্য কোনো কর্মসূচি নেওয়া যায় কিনা, তা যাচাই করা দরকার।
৭. দরিদ্র শিশুদের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, আশ্রয় নিশ্চিত করতে হবে। শিশু- অধিকারের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
৮. শিশু-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে গণসচেতনতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

উপসংহার: বাংলাদেশের শ্রমবাজারে শিশুশ্রম একটি বিরাট অংশ জুড়ে আছে। হঠাৎ করে শিশুশ্রম বন্ধ বা নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করার আগে দেখা প্রয়োজন, শিশুরা কেন শ্রম দিতে বাধ্য হয়। এর কারণগুলো চিহ্নিত করে বাস্তবমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুশ্রম হ্রাস করতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। সে হিসেবে সরকারের যেমন যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি জনগণকেও শিশুশ্রমের ভবিষ্যৎ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। তবেই বাংলাদেশে শিশুশ্রম প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

আরও পড়ুন……

Advertisements

Leave a Reply