Table of Contents
আল্লাহ সর্বপ্রথম কী সৃষ্টি করেছিলেন ? | সৃষ্টির মূল কী ছিল?
অনাদি ও অনন্ত সত্ত্বা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন যখন একা ও অপ্রকাশিত ছিলেন, তখন তাঁর আত্মপ্রকাশের সাধ ও ইচ্ছা জাগরিত হলো। তখন তিনি একক সৃষ্টি হিসেবে নবী করিম [ﷺ]-এঁর নূর মোবারক পয়দা করলেন এবং নাম রাখলেন মুহাম্মদ [ﷺ] (কানজুদ্দাকায়েক –ইমাম গাযালী)। সেই নূরে মোহাম্মদী’র সৃষ্টি রহস্য ও প্রকৃতি সম্পর্কে স্বয়ং নবী করিম [ﷺ] মারফু মুত্তাসিল হাদীসের মাধ্যমে পরিষ্কার ব্যাখ্যা করে গেছেন। উক্ত হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে রাসূলে পাক [ﷺ]-এঁর একনিষ্ঠ খাদেম ও মদিনার ৬ নং সাহাবী হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) কর্তৃক।
উক্ত হাদিসটি প্রথম সংকলিত হয়েছে “মোসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক” নামক হাদীস গ্রন্থে। মোহাদ্দেস আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন ইমাম বোখারী (رحمة الله عليه)-এঁর দাদা ওস্তাদ এবং ইমাম মালেক (رحمة الله عليه)-এঁর শাগরিদ। পরবর্তীতে উক্ত গ্রন্থ হতে অনেক হাদীস বিশারদ নিজ নিজ গ্রন্থে হাদীসখানা সংকলিত করেছেন। যেমনঃ ইমাম কাস্তুলানী (رحمة الله عليه) তাঁর রচিত নবী করিম [ﷺ]-এঁর জীবনী গ্রন্থ ‘মাওয়াহেবে লাদুনিয়া‘য় উক্ত হাদিসখানা সংকলন করেছেন। মিশরের আল্লামা ইউসূফ নাবহানী তাঁর রচিত ‘আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া’ নামক আরবি গ্রন্থেও উক্ত হাদিসখানা উল্লেখ করেছেন।
কিতাবখানা নবী করিম [ﷺ]-এঁর সৃষ্টি সম্পর্কে স্ববিখ্যাত এবং বিস্তারিত। তাই বিজ্ঞ পাঠকের সামনে আমরা উক্ত হাদীসখানা অনুবাদসহ তুলে ধরছি। এ রেওয়ায়েত ছাড়া অন্যান্য রেওয়ায়েত অসম্পূর্ণ, অস্পষ্ট ও খন্ডিত এবং উসূলে হাদীসের মাপকাঠিতে অনির্ভরযোগ্য বা মারজুহ্।
হাদীসখানা নিন্মরুপঃ
روى عبد الرزاق عن معمر عن ابن المنكدر عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه قال قلت يارسول الله بأبي انت وامي أخبرني عن اول شيئ خلقه الله تعالى قبل الاشياء قال ياجابر ان الله تعالى خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذلك النور يلدور بالقدرة حيث شاء الله تعالى ولم يكن في ذلك الوقت لوح ولا قلم ولا جنة ولا نار ولا ملك ولا سمماء ولا ارض ولا شمس ولا قمر ولا جني ولا انسي. فلما اراد الله تعالى ان يخلق الخلق قسم ذلك النور اربعة اجزاء فخلق من الجزء الاول القلم ومن الثاني اللوح ومن الثالث العرش ثم قسم الجزء الرابع أربعة اجزاء فخلق من الجزء الاول حملة العرش ومن الثاني الكرسي ومن الثالث باقي الملائكة ثم قسم الجزء الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول السموات ومن الثاني الارضين ومن الثالث الجنة والنار ثم قسم القسم الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول نور ابصار المؤمنين ومن الثاني نور قلوبهم وهى المعربفة بالله تعالى ومن الثالث نور انسفهم وهو التوحيد لا اله الا الله محمد رسول الله. (الجزء المفقود من المنصنف).
আল্লাহ সর্বপ্রথম কী সৃষ্টি করেছিলেন ? | সৃষ্টির মূল কী ছিল?
অর্থঃ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (ইমাম বোখারীর দাদা ওস্তাদ) মোয়াম্মার হতে, তিনি ইবনে মুনকাদার হতে, তিনি হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেনঃ
"হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন- আমি আরয করলাম, হে আল্লাহ’র রাসূল [ﷺ]! আপনার উপর আমার পিতা-মাতা উৎসর্গীত হোক, আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে নবী করিম [ﷺ] বললেন- "হে জাবের, আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম সমস্ত বস্তুর পূর্বে তাঁর 'নিজ নূর হতে' তোমার নবীর নূর পয়দা করেছেন। তারপর আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছানুযায়ী ঐ নূর (লা-মকানে) পরিভ্রমণ করতে থাকে।
কেননা ঐ সময় না ছিল লাওহে-মাহফুয, না ছিল কলম, না ছিল বেহেস্ত, না ছিল দোযখ, না ছিল ফেরেশতা, না ছিল আকাশ, না ছিল পৃথিবী, না ছিল সূর্য, না ছিল চন্দ্র, না ছিল জ্বীনজাতি, না ছিল মানবজাতি। অতঃপর যখন আল্লাহ তা'আলা অন্যান্য বস্তু সৃষ্টি করার মনস্থ করলেন, তখন আমার ঐ নূরকে চারভাগে বিভক্ত করে প্রথমভাগ দিয়ে কলম, দ্বিতীয়ভাগ দিয়ে লাওহে-মাহফুয এবং তৃতীয়ভাগ দিয়ে আরশ সৃষ্টি করলেন। অবশিষ্ট এক ভাগকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করে প্রথমভাগ দিয়ে আরশ বহনকারী ফেরেশতা, দ্বিতীয় অংশ দিয়ে কুরসি এবং তৃতীয় অংশ দিয়ে অন্যান্য ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন।
দ্বিতীয় চার ভাগের এক ভাগকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করে প্রথমভাগ দিয়ে আকাশ, দ্বিতীয়ভাগ দিয়ে জমিন (পৃথিবী) এবং তৃতীয়ভাগ দিয়ে বেহেস্ত ও দোযখ সৃষ্টি করলেন। তৃতীয়বার অবশিষ্ট একভাগকে পুনরায় চার ভাগে বিভক্ত করে প্রথমভাগ দিয়ে মু’মিনদের নয়নের নূর - (অন্তর্দৃষ্টি), দ্বিতীয়ভাগ দিয়ে মু’মিনদের কলবের নূর - তথা আল্লাহর মা'রেফাত এবং তৃতীয়ভাগ দিয়ে মু'মিনদের মহব্বতের নূর - তথা তাওহীদী কলেমা 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর্ রাসুলুল্লাহ' সৃষ্টি করেছেন।" (২৫৬ ভাগের এক ভাগ থেকে অন্যান্য সৃষ্টিজগত পয়দা করলেন)।
- মাওয়াহেবে লাদুনিয়া ও মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক - (আল জুয্উল মাফকুদ অংশ, হাদিস নং ১৮, বৈরুত থেকে প্রকাশি ২০০১)।
ব্যাখ্যাঃ উক্ত হাদীসে বর্ণিত (من نوره) বা তাঁর ‘নিজ নূর’ হতে শব্দটির ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله عليه) মিশকাত শরীফে লিখেছেন – “আয়-মিন লামআতে নূরিহী’ – অর্থাৎঃ আল্লাহ তা’আলা আপন যাতি নূরের জ্যোতি দিয়ে নবীজীর নূর পয়দা করেছেন।
- সুদ বা অবৈধ পন্থায় আয় করা টাকা দিয়ে মসজিদ মাদরাসায় দান করলে ঐ দানের সাওয়াব পাওয়া যাবে কিনা?
- রমজানের ৩০ দিনের দোয়া যা আমাদের অজানা ! রমজানের দোয়া
- রিযিক বৃদ্ধির দোয়া বা অভাব দূর করার দোয়া | Islamic Post
- জানাজা নামাজের নিয়মাবলী | জানাযার নামাযের পদ্ধতি (হানাফী)
- পাচঁ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত |ফজরের নামাজের ফজিলত
- স্বামী স্ত্রী সহবাসের দোয়া ও নিয়ম