হযরত হামযা এবং হযরত ওমর (রা) এর ইসলাম গ্রহন

1
144
হযরত হামযা এবং হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আজমাইনের ইসলাম গ্রহন
হযরত হামযা এবং হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আজমাইনের ইসলাম গ্রহন
Advertisements
5/5 - (1 vote)

হযরত হামযা এবং হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আজমাইনের ইসলাম গ্রহন

হযরত হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহু কিভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন ?

হযরত হামযা ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর চাচা, বয়সে আমাদের নবী থেকে দু’চার বছর বড় ছিলেন। তাঁরা শৈশবে উভয়ে একসাথে খেলাধুলা করতেন। হযরত হামযা (রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু) হযুরকে বেশী ভালবাসতেন কিন্তু তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। হযরত হামযা বড় বাহাদুর ও শক্তিশালী ছিলেন। প্রতি দিন সকালে তীর-বর্শ নিয়ে বের হয়ে যেতেন এবং সারা দিন শিকারে নিয়োজিত থাকতেন। সন্ধ্যায় ফিরে এসে প্রথমে হেরম শরীফে যেতেন এবং তওয়াফ করতেন।

সন্ধ্যা বেলা কোরাইশের সরদারেরা হেরম শরীফে পৃথক পৃথক আসর জমাতো। হযরত হামযা কিছুক্ষণের জন্য ওদের সাথে বসতেন। কোরাইশের প্রত্যেক সরদারের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। ওরাও তাঁকে বীর পুরুষ হিসেবে যথেষ্ট সমাদর করতেন। একদিন আবু জেহেল হুযুরের সাথে অনেক বেআদবী করলো। সন্ধ্যায় হযরত হামযা শিকার থেকে ফিরে আসলে তাঁর বাঁদী আবু জেহেলের বেয়াদবীর সমস্ত ঘটনা শুনালো। হযরত হামযা শুনা মাত্রই খুবই ক্ষেপে গেলেন। এবং ওই অবস্থায় তীর বর্শাসহ হেরম শরীফে এসে আবু জেহেলকে বললেন, ”আমি মুসলাম হয়ে গেলাম”। হযরত হামযার ইসলাম গ্রহণে মুসলমানদের শক্তি অনেক বৃদ্ধি পেলো। এ ঘটনার দু’ চারদিন পর হযরত ওমরও মুসলমান হয়ে গেলেন।

আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যখন নবুয়তের ঘোষণা দান করেন, তখন হযরত ওমরের বয়স হয়েছিল সাতাশ বছর। সে সময় তাকে বড় বাহাদুর ও বীর পুরুষ মনে করা হতো। যারা ইসলাম গ্রহণ করতেন, ওমর বিশেষ করে ওদেরকেই স্বীয় অত্যাচারের লক্ষ্য বস্তু ঠিক করতেন। তাঁর বাঁদী বসিনা ইসলাম গ্রহণ করায় ওকে এমন মারধর করতেন যে মারতে মারতে নিজেই হয়রান হয়ে যেতেন এবং বলতেন, “আমি একটু দম নিয়ে নি, পূনরায় মারধর করবো।

Advertisements

হযরত হামযা এবং হযরত ওমর (রা) আজমাইনের ইসলাম গ্রহন

একদিন নিজে নিজে চিন্তা করলেন যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে হত্যা করে ফেললে সব আপদ-মিটে যায়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ পূৰ্বক তলোয়ার হাতে নিয়ে সোজা হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সন্ধানে বের হলেন। পথে হযরত নঈম বিন আবদুল্লাহের সাথে দেখা হলো, যিনি ইতি পূর্বে মুসলমান হয়েছিলেন। তিনি ওমরকে মারমুখি অবস্থায় দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ওমর কি ব্যাপার, কোন দিকে যাবার উদ্দেশ্য? বললেন, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে খতম করার জন্য যাচ্ছি। হযরত নঈম ইবনু আবদুল্লাহ বললেন, প্রথমে ঘরের খবর লও। তোমার প্রিয় বোন ও ভগ্নিপতিও তো মুসলমান হয়ে গেছে।

হযরত নঈম বিন আবদুল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল যে ওমর এ খবর শুনে ভগ্নিপতির ঘরের দিকে যাবে আর তিনি এ সুযোগে দৌড়ে গিয়ে হুযুরকে ওমরের উদ্দেশ্যের কথা অবহিত করবেন। ওমর এ কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে চিন্তাধারা পরিবর্তন করে বোনের বাসায় গেলেন। ও সময় তাঁর বোন কুরআন মজিদ তেলাওয়াত করছিলেন। ওমর আসার কথা শুনা মাত্র চুপ হয়ে গেলেন এবং কুরআন মজিদের পৃষ্ঠা লুকিয়ে ফেললেন। কিন্তু ওমরের কানে আওয়াজ পৌছে ছিল। তাই তিনি ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কিসের আওয়াজ ছিল? বোন বললেন, ‘কিছুই না”।

আমাদের বিদ্যালয় রচনা – বাংলা ২য় পত্র – সকল শ্রেণির জন্য

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘লুকোচুরি করনা আমি শুনেছি, তোমরা উভয়ে মুসলমান হয়ে গেছ। এটা বলার পর ভগ্নিপতিকে মারধর করতে শুরু করলেন। বোন স্বামীকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে, সেও আহত হয়ে গেল এবং ওর মাথা থেকে রক্ত ঝরতে লাগল। এ অবস্থায় বোন বললো, “ভাইজান, তোমার যা ইচ্ছে করতে পার কিন্তু আমরা ইসলাম ত্যাগ করতে পারি না। প্রিয় বোনের এ কথাটুকু ওমরের মনে দারুন রেখাপাত করলো। বোনকে রক্ত রঞ্জিত দেখে ওমরের মন আরও কাবু হয়ে গেল। পরিশেষে ওমর বললেন, ঠিক আছে, তোমরা যা পড়তে ছিলে, তা আমাকেও পড়ে শুনাও দেখি।

তখন বোন ফাতিমা সুরা হাদিদ থেকে তেলাওয়াত শুরু করলেন। কয়েক আয়াত পড়তে, না পড়তেই হযরত ওমর হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, “আমি সাক্ষ্য, দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কেউ ইবাদতের উপযোগী নয়, আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল।” এটা সেই সময়ের কথা যখন কুরাইশরা হুযুর (সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর জানের দুশমন হয়ে গিয়ে ছিল এবং হুযুর (দঃ) তখন ছফা পাহাড়ে হযরত আরকমের ঘরে অবস্থান নিয়ে ছিলেন হযরত ওমর হুযুরের আস্তানা মুবারকে গিয়ে হাতে দরজায় করাঘাত করলেন।

সাহাবায়ে কিরাম ওমরকে তলোয়ারসহ দেখে ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলেন। হযরত হামজা ওনাদের সাহস দিয়ে বললেন, ওকে আসতে দাও, ভাল উদ্দেশ্যে আসলে ঠিক আছে, অন্যথায় ওর তলোয়ার দ্বারা ওর মাথা উড়ায়ে দিব। ওমর যখন ঘরে প্রবেশ করলেন, হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এগিয়ে গিয়ে ওর আচল ধরে টান দিলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন ওমর কি উদ্দেশ্যে তোমার আগমণ? হুযুরের এ প্রভাবান্বিত আওয়াজে ওমর কাঁপতে লাগলেন এবং মস্তক অবনত করে মৃদুস্বরে আরয করলেন, “ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! মুসলমান হবার জন্য এসেছি।” একথা শুনা মাত্রই হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এবং উপস্থিত সকল সাহবায়ে কিরাম এমন জোরে “আল্লাহু আকবর’ বলে শ্লোগান দিয়েছিলেন।

যে মক্কার সমস্ত পাহাড় সমূহ থেকে তা প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। হযরত ওমরের মুসলমান হওয়ার পর ইসলামের নবযাত্রা শুরু হলো। ওই সময় পর্যন্ত যদিওবা প্রায় চল্লিশ জন ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং এদের মধ্যে কুরাইশের বীর কেশরী হযরত হামজা ছিল, কিন্তু তখনও মুসলমানেরা প্রকাশ্যে স্বাধীন ভাবে নামায পড়তে পারতেন না। হযরত ওমরের ইসলাম গ্রহণের পর মুসলমানদের সাহস এতটুকু বেড়ে গেল যে ওনারা কাবা শরীফে গিয়ে নামায আদায় করতে লাগলেন।

সাহাবায়ে কিরামের উপর কুরাইশদের অত্যাচার প্রভাবশালী মুসলমানদের উপর কাপুরুষ কাফিরদের বাহাদুরী চলতো না। তারা গরীব মুসলমানদের উপরই অত্যাচার চালাতো। ওদের কে ধরে নিয়ে প্রখর রোদে উত্তপ্ত বালিতে শোয়ায়ে রাখতো, বুকের উপর ভারী পাথর উঠিয়ে দিত যাতে এদিক সেদিক হতে না পারে। উত্তপ্ত বালি শরীরে ছিটায়ে দিত। গরম লোহা দ্বারা শরীরে দাগ দিত, গভীর পানিতে ওনাদেরকে ডুবায়ে ধরতো। হযরত বেলাল (রাদি আল্লাহ তাআলা আনহু) কুরাইশের নামকরা সরদার উমাইয়্যা ইবনু খলফের গোলাম ছিলেন।

দ্বিপ্রহরের সময় উত্তপ্ত বালির উপর শোয়ায়ে তাঁর বুকের উপর ভারী পাথর রাখতো এবং বলতো “বেলাল, ইসলাম থেকে ফিরে যাও, নতুবা এভাবেই তোমাকে মেরে ফেলা হবে। কিন্তু হযরত বেলালের মুখে এক কথা ‘আহাদ!আহাদ! আল্লাহ এক, আল্লাহ এক’। এত কিছুর পরও বেলাল ইসলাম থেকে ফিরতে রাজি হলেন না। তখন উমাইয়া ওর গলায় রশি বেধে রাস্তাঘাটের টোকাইদের বললো“একে টেনে টেনে সারা শহরে ঘুরাও। অতপর এভাবে প্রতিদিন মিছিল সহকারে হযরত বেলালকে টেনে টেনে রাস্তা ঘাটে ঘুরানো হতো। কিন্তু হযরত বেলালের মুখে সেই এক কথা ‘আল্লাহ এক’।

হযরত আমার যখন মুসলমান হন, তখন কাইশ ওনাকে জলন্ত আগুনে শোয়াতো এবং এমন বেদম প্রহার করতো যে বেচারা বেহুশ হয়ে যেত। ওনার মাকেও আবু জেহেল মেরে শহীদ করে ফেললো। কিন্তু এরপরও হযরত আমার বলেছিলেন, “যত জুলুম ইচ্ছে করতে পার, কিন্তু, ইসলাম কখনো ত্যাগ করবো না। হযরত খাববাবকে কুরাইশরা জলন্ত কয়লার উপর শোয়ায়ে ওনার বুকের উপর একজন দাঁড়িয়ে থাকতো যেন এ পাশ ও পাশ হতে না পাবে, কয়লা ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত এভাবে রাখা হতো। এ অবস্থায়ও হযরত খাববাব বলতেন, এ আগুনে জ্বলতে রাজি কিন্তু দোযখের আগুনে জ্বলতে রাজি নই। ওকে একবার উমাইয়্যা হযরত আবু ফকিয়ার পায়ে রশি বেধে লোকদেরকে নির্দেশ করল, ওকে হেচড়ায়ে নিয়ে যাও এবং গরম বালিতে শোয়ায়ে দাও। রাস্তায় নিজেই ওনাকে হেঁচড়ায়ে নিয়ে যাচ্ছিল ।

সালামের সঠিক নিয়ম | সালাম এর উত্তর | আসসালামু আলাইকুম এর উত্তর

হযরত আবু ফকিয়া উমাইয়াকে বলত “তোমার এবং আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ’’। এতে উমাইয়্যা রাগান্বিত হয়ে জোরে ওনার গলা চেপে ধরেছিল, লোকেরা মনে করছিল যে ওনি মারা গেছেন । আর একবার ওনার বুকের উপর এক বিরাট পাথর রেখেছিল, যার ফলে জিহবা বের হয়ে এসেছিল। হযরত উছমান যখন মুসলমান হন, তখন ওনার চাচা ওনাকে রশিদ্বারা বেঁধে বেদম মারধর করেছিল। সেই রকম হযরত জুবাইরকেও ওনার চাচা চাদর জড়ায়ে ধোঁয়া দিত যার ফলে তিনি বেহুশ হয়ে যেতেন। আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর সাহাবীদের উপর এ ধরনের অমানুষিক অত্যাচার হতে দেখলেন, তখন তিনি ওনাদেরকে মক্কা ছেড়ে হাবশা চলে যাবার জন্য নির্দেশ দিলেন। সেখানে এক ন্যায় পরায়ন বাদশার রাজত্ব ছিল।

বিঃ দ্রঃ-আল্লাহর উদ্দেশ্যে এক জায়গা ত্যাগ করে অন্য জায়গায় যাওয়াকে হিজরত বলে ।

Advertisements

1 COMMENT

Leave a Reply