অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?

1
129
অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?
অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?
Advertisements
5/5 - (1 vote)

Table of Contents

অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?

ইসলামী আইন অনুযায়ী, অজু হলো শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি পদ্ধতি। অজু ছাড়া নামাজ পড়া কখনোই সম্ভব নয় , কারণ নামাজের আগে অজু পূর্বশর্ত । তো আজকে আপনাদের জন্য আমরা শেয়ার করব অজু কি? অজুর ফরজ কয়টি? অজু ভঙ্গের কারণ? মেয়েদের অজু ভঙ্গের কারণ? অজু ভঙ্গের কারণ কয়টি ? এছাড়া স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? এই বিষয় গুলো আমাদের জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ । তো চলুন শুরু করা যাক –

وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡمَحِیۡضِ ؕ قُلۡ هُوَ اَذًی ۙ فَاعۡتَزِلُوا النِّسَآءَ فِی الۡمَحِیۡضِ ۙ وَ لَا تَقۡرَبُوۡهُنَّ حَتّٰی یَطۡهُرۡنَ ۚ فَاِذَا تَطَهَّرۡنَ فَاۡتُوۡهُنَّ مِنۡ حَیۡثُ اَمَرَکُمُ اللّٰهُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَهِّرِیۡنَ

পবিত্র কোরআনে আছে -“আর তারা আপনাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন, তা কষ্ট। সুতরাং তোমরা হায়েযকালে স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে।”-(সূরা বাকারা,আয়াত:২২২)।

ধৌত করার সংজ্ঞা বা অজুর সংঙ্গা ?

কোন অঙ্গ ধোয়া মানে সেই অঙ্গের প্রতিটি অংশে কমপক্ষে দুই ফোঁটা পানি ঢেলে দেওয়া বা পৌছানো। শুধু ভিজে যাওয়া, তেলের মত পানি মালিশ করা বা এক ফোঁটা পানি প্রবাহিত করাকে অজু করা বলা হয় না এবং এভাবে অজু বা গোসল কোনটায় গ্রহনযোগ্য নয় ।

Advertisements
  • অজুর ফরজ
  • অজুর ফরজ কয়টি
  • অজুর ফরজ চারটি কি কি
  • অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি
  • অজুর ফরজ কি কি

সকল প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছেন নিচে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন ।

অজুর ফরজ ৪ টি        
  • মুখমন্ডল ধৌত করা।
  • কনুই সহ দু’হাত ধৌত করা।
  • মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ্ করা।
  • টাখ্নু সহ দুই পা ধৌত করা।

(ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৩, ৪, ৫ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা)

নামাজের পূ্র্বে অবশ্যই ওযু করতে হয়।

আল্লাহ তাআলা বান্দার নামাজ আদায়ের জন্য ওযুকে করেছেন ফরজ। বিনা ওযুতে ফরজ ইবাদত করা পাপের কাজ।

لَّا یَمَسُّهٗۤ اِلَّا الۡمُطَهَّرُوۡنَ

কোরআন শরীফ পড়তে ও স্পর্শ করতেও ওযু করতে হয় এটা কোরআনের প্রতি আদব এছাড়া দুরুদে পাক পাঠ করতে হলেও অযু করা মুস্তাহাব। পবিত্র কোরআনে আছে -‘যারা পবিত্র তারা ছাড়া একে কেউ স্পর্শ করবেন না। ’বা “যারা সম্পূর্ণ পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না।” -(সূরা ওয়াক্কিয়াহ্‌, আয়াত:৭৯)। দেহ ও পরিধেয় কাপড়ের পবিত্রতা আর্জনকে বলে তাহারাত্‌। ওযু বা গোসলের মাধ্যমে তাহারাত্‌ আর্জন করা যায়।

হযরত মোহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন – ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ধর্মের অর্ধেক। ’ (সহীহ মুসলিম)

অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?

অযুর ১৪টি সুন্নাত

হানাফী মাযহাব মতে অযুর পদ্ধতিতে অযুর কিছু সুন্নাত ও মুস্তাহাব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। এখন তার বিস্তারিত আলোচনা লক্ষ্য করুন:

অযুর ১৪টি সুন্নাত
❁ নিয়্যত করা

❁ بِسْمِ الله পড়া। যদি অযুর পূর্বে কেউ بِسْمِ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰه বলে, তাহলে যতক্ষণ অযু সহকারে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেস্তাগণ তাঁর জন্য নেকী লিখতে থাকবে।❁ উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া❁ তিনবার মিসওয়াক করা❁ তিন অঞ্জলি পানি দিয়ে তিনবার কুলি করা,❁রোযাদার না হলে গড়-গড়া করা❁ তিন অঞ্জলী পানি দিয়ে তিনবার নাকে পানি দেয়া।❁ দাঁড়ি থাকলে (ইহরামে না থাকাবস্থায়) দাঁড়ি খিলাল করা।❁ হাত ও পায়ের আঙ্গুল সমূহ খিলাল করা।❁ সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসেহ করা।❁ কান মাসেহ্ করা❁ অযুর ফরযগুলোতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। (অর্থাৎ প্রথমে মুখ তারপর কনুই সহ হাত ধোয়া, তারপর মাথা মাসেহ্ করা তারপর পা ধোয়া) আর❁ একটি অঙ্গ শুকানোর আগে অন্য অঙ্গ ধৌত করা।(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৯৪ পৃষ্ঠা)

অযুর ২৯টি মুস্তাহাব

অযুর ২৯টি মুস্তাহাব
❁ কিবলামুখী হওয়া,

❁ উঁচু জায়গায়,  বসা, পানি প্রবাহিত করার সময় অঙ্গসমূহের উপর হাত বুলানো, শান্তভাবে অযু করা,

❁অযুর অঙ্গ সমূহ প্রথমে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া, বিশেষ করে শীতের সময়ে,

❁ অযু করার সময় প্রয়োজন ছাড়া কারো সাহায্য না নেয়া,

❁ ডান হাতে কুলি করা,

❁ ডান হাতে নাকে পানি দেয়া,

❁ বাম হাত দ্বারা নাক পরিস্কার করা,

❁ বামহাতের কনিষ্টাঙ্গুলী নাকে প্রবেশ করানো।

অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?

❁আঙ্গুল সমূহের পিঠ দ্বারা ঘাঁড় মাসেহ্ করা,

❁ কান মাসেহ্ করার সময় হাতের ভিজা কনিষ্ঠাঙ্গুলী কানের ছিদ্রে প্রবেশ করানো,

❁আংটি নাড়া দেওয়া, যখন আংটি ঢিলা হয় এবং আংটির নিচে পানি পৌঁছেছে বলে প্রবল ধারণা হয়, আর যদি আংটি আঙ্গুলের সাথে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকে তাহলে আংটি নেড়ে এর নিচে পানি পৌঁছানো ফরয।

❁ শরয়ী মাযুর (অক্ষম ব্যক্তি) না হলে নামাযের সময় শুরু হওয়ার পূর্বেই অযু করা। (শরয়ী মাযুরের বিস্তারিত বিধান এই রিসালা থেকে দেখে নিন)❁ যারা পরিপূর্ণভাবে অযু করে অর্থাৎ যাদের কোন অঙ্গই পানি প্রবাহিত না হয়ে থাকে না তাদের জন্য নাকের দিকস্থ চোখের উভয় কোণা, টাখনু, গোড়ালি, পায়ের তালু, গোড়ালীর উপরের মোটা রগ, আঙ্গুল সমূহের মাঝখানের ফাঁকা জায়গা, কনুই ইত্যাদি অঙ্গ সমূহের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা মুস্তাহাব, যাতে উক্ত অঙ্গ সমূহ শুষ্ক থেকে না যায়। আর যারা খামখেয়ালী তাদের জন্য অযুর সময় উক্ত জায়গাগুলোর প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা ফরয। কেননা, অধিকাংশের ক্ষেত্রে উক্ত জায়গাগুলো ধৌত করার পরও শুষ্ক থেকে যেতে দেখা গিয়েছে। আর এটা খামখেয়ালিপনারই কারণে হয়ে থাকে। এরূপ খামখেয়ালিপনা হারাম এবং বিশেষভাবে খেয়াল রাখা ফরয যাতে কোন অঙ্গ শুষ্ক থেকে না যায়।❁অযুর লোটা (বদনা) বাম দিকে রাখুন। যদি বড় গামলা বা পাতিল ইত্যাদি থেকে অযু করে, তাহলে ডান পাশে রাখুন।❁মুখমন্ডল ধোয়ার সময় কপালের উপর এমনভাবে পানি দেয়া যেন কপালের উপরের কিছু অংশও ধুয়ে যায়।❁ মুখমন্ডল, হাত ও পায়ের উজ্জলতা বৃদ্ধি করা অর্থাৎ যতটুকু জায়গা ধৌত করা ফরয তার চতুর্দিকের কিছু কিছু অংশ বাড়িয়ে ধৌত করা। যেমন- হাত ধোয়ার সময় কনুইর উপর বাহুর অর্ধেক পর্যন্ত ও পা ধোয়ার সময় টাখনুর উপর গোছার অর্ধেক পর্যন্ত ধৌত করা।❁দুই হাতে মুখমন্ডল ধৌত করা।❁হাত ও পা ধোয়ার সময় আঙ্গুল সমূহ থেকে ধোয়া শুরু করা।❁প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার পর হাত বুলিয়ে অঙ্গ থেকে পানির ফোঁটাগুলো ফেলে দেয়া, যেন শরীর অথবা কাপড়ের উপর ফোঁটা ফোঁটা না ঝরে। বিশেষত: মসজিদে যাওয়ার সময়। কেননা, মসজিদের ফ্লোরে অযুর পানির ফোঁটা ফেলা মাকরূহে তাহরীমী।❁ প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় ও মাথা মাসেহ করার সময় অযুর নিয়্যত কার্যকর রাখা। ❁অযুর শুরুতে بِسْمِ الله পাঠ করার সাথে সাথে দরূদ শরীফ ও কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা।❁ বিনা প্রয়োজনে অযুর অঙ্গ সমূহ না মোছা, যদি নিতান্তই মুছতে হয় তাহলে সম্পূর্ণ না শুকিয়ে সামান্য আদ্র (ভিজা) অবস্থায় রেখে দেয়া। কেননা, কিয়ামতের দিন নেকীর পাল্লায় রাখা হবে।❁ অযুর পর হাত না ঝাড়া, কারণ এটা শয়তানের জন্য পাখায় পরিণত হয়,❁পানি ছিটানোর সময় পায়জামার উক্ত অংশকে জামার প্রান্ত বা আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত। অযুর সময় এমন কি সবসময় পায়জামার উক্ত অংশ জামার আচল বা চাদর ইত্যাদি দ্বারা ঢেকে রাখা উত্তম। যাতে ভেসে উঠা সতর দেখা না যায়।❁ যদি মাকরূহ সময় না হয় তাহলে অযুর পর দু’রাকাত নফল নামায আদায় করা, যাকে তাহিয়্যাতুল অযু বলা হয়।(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৯৩-৩০০ পৃষ্ঠা)

অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?

অযুর ১৬টি মাকরূহ

অযুর ১৬টি মাকরূহ
❁ অযুর জন্য নাপাক জায়গায় বসা

❁নাপাক জায়গায় অযুর পানি ফেলা❁অযুর অঙ্গ সমূহ থেকে লোটা (বদনা) ইত্যাদিতে ফোঁটা ফোঁটা পানি ফেলা, (মুখ ধোয়ার সময় পানিপূর্ণ অঞ্জলীতে সাধারণত মুখমন্ডল হতে পানির ফোটা পড়ে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা একান্ত প্রয়োজন)❁কিবলার দিকে থুথু, কফ, কুলির পানি ইত্যাদি নিক্ষেপ করা❁প্রয়োজন ছাড়া দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা,❁ অতিরিক্ত পানি খরচ করা (আল্লামা মুফতী আমজাদ আলী আযমীرَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ “বাহারে শরীয়াত (সংগৃহীত) ”১ম খন্ডের ৩০২-৩০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন: নাকে পানি দেয়ার সময় আধা অঞ্জলী থেকে বেশি পানি ব্যবহার করা অপচয়)❁এত কম পানি ব্যবহার করা যাতে সুন্নাত আদায় হয় না। অতএব পানির নল এত বেশি খোলাও উচিত নয় যাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পড়ে, আবার এত সামান্য পরিমাণ খোলাও উচিত নয় যাতে সুন্নাত আদায় না হয় বরং মধ্যম ভাবেই পানির নল খোলা উচিত।❁মুখে পানি মারা❁ মুখে পানি দেয়ার সময় ফুঁক দেয়া❁এক হাতে মুখ ধোঁয়া কারণ এটা রাফেজী ও হিন্দুদের রীতি,❁গলা মাসেহ্ করা।❁ বাম হাতে কুলী অথবা নাকে পানি দেয়া।❁ডান হাতে নাক পরিষ্কার করা❁তিনবার নতুন পানি দিয়ে তিনবার মাথা মাসেহ্ করা,❁ রোদের তাপে গরম করা পানি দিয়ে অযু করা,❁ মুখ ধোয়ার সময় উভয় ঠোঁট ও উভয় চক্ষু দৃঢ়ভাবে বন্ধ রাখা। যদি ঠোঁট ও চোখের কিছু অংশও শুষ্ক থেকে যায় তাহলে অযুই হবে না। অযুর প্রতিটি সুন্নাত বর্জন করা মাকরূহ আর প্রতিটি মাকরূহ বর্জন করা সুন্নাত। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩০০-৩০১ পৃষ্ঠা)

অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?

রোদের তাপে গরম পানির ব্যাখ্যা

সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ  এর লিখিত মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত (সংগৃহীত) ”১ম খন্ডের ৩০১ পৃষ্ঠার পাদটীকায় লিখেন: যে পানি রোদের তাপে গরম হয়ে গেলো, সেটা দ্বারা অযু করা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহ নয় বরং এতে কিছু শর্ত রয়েছে, যার আলোচনা পানির অধ্যায়ে আসবে এবং এর দ্বারা অযু করা মাকরূহে তানযীহি, তাহরিমী নয়। পানির অধ্যায় ৩৩৪ পৃষ্ঠায় লিখেন: যে পানি উষ্ণ দেশে গরম ঋতুতে স্বর্ণ রূপা ছাড়া অন্য কোন ধাতুর প্লেটের মধ্যে রোদে গরম হয়ে গলো। তখন যতক্ষণ পর্যন্ত গরম থাকে এর দ্বারা অযু ও গোসল না করা উচিত এবং পান না করা উচিত। বরং শরীরের মধ্যে যাতে না পৌঁছে, যদিও কাপড় ভিজে যায়। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত ঠান্ডা না হয় সেটা পরিধান করা থেকে বেঁচে থাকবে। এই পানি ব্যবহারের দ্বারা শরীরে সাদা দাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরও যদি কেউ অযু গোসল করে নেয়, হয়ে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩০১, ৩৩৪ পৃষ্ঠা)

ব্যবহৃত পানির গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

যদি অযুহীন ব্যক্তির হাত, আঙ্গুলের মাথা, নখ অথবা শরীরের এমন কোন অংশ যা অযুতে ধৌত করা হয়, জেনে শুনে অথবা ভূলবশত ১০০ বর্গগজ কম পানিতে (যেমন-পানি ভর্তি বালতি অথবা লোটা (বদনা) ইত্যাদিতে) পড়ে, তাহলে এটা ব্যবহৃত পানি হয়ে গেলো। ঐ পানি দ্বারা অযু ও গোসল করা যাবে না। অনুরূপ যার উপর গোসল ফরয হয়েছে তার শরীরের কোন ধৌতহীন অঙ্গ যদি পানিতে স্পর্শ করে ঐ পানিও অযু-গোসলের জন্য উপযুক্ত নয়। হ্যাঁ! ধৌত করা কোন হাত বা অঙ্গ যদি পড়ে তাহলে কোন ক্ষতি নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা) (ব্যবহৃত পানি ও অযু-গোসলের বিস্তারিত আহকাম শিখার জন্য “বাহারে শরীয়াত” ২য় খন্ড অধ্যয়ন করুন)

মাটি মিশ্রিত পানি দ্বারা অযু হবে কিনা?

❁ পানির মধ্যে যদি বালি কাদা মিশ্রিত হয়ে যায়, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত মসৃণ থাকে এর দ্বারা অযু জায়েয। আমি বলি (আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ  বলেন: “আমি বলছি”) কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া কাদা মিশ্রিত পানি দ্বারা অযু করা নিষেধ যেহেতু আকৃতি বিকৃত অর্থাৎ আকৃতি বিকৃত হয়ে যাওয়াটা শরয়ীভাবে হারাম। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ৪র্থ খন্ড, ৬৫০ পৃষ্ঠা) জানা গেলো; মুখে এই ধরণের মাটি মিশ্রিত করা যার দ্বারা আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায় বা মুখ কালো করা। যেমনিভাবে অনেক সময় চোর কয়লা ইত্যাদি দিয়ে মুখ কালো করে দেয়। এটা হারাম ইচ্ছাকৃত ভাবে কাফেরের ও বিকৃত করা অর্থাৎ চেহারা পরিবর্তন করা জায়েয নেই।

❁ যেই পানিতে কোন দূর্গন্ধ যুক্ত জিনিস পাওয়া যায় এর দ্বারা অযু করা মাকরূহ। বিশেষ করে এর দূর্গন্ধ নামাযের মধ্যেও বিদ্যমান থাকে এর দ্বারা নামায মাকরূহে তাহরিমী হবে। (প্রাগুক্ত, ৬৫০ পৃষ্ঠা)

পান ভক্ষনকারী মনোযোগ দিন

আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, অলীয়ে নেয়ামত, আজীমুল বারাকাত, আজীমুল মারতাবাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালত, হামীয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদ‘আত, ‘আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, বা-ইছে খাইরু বারাকাত, হযরত আল্লামা মাওলানা আলহাজ্ব হাফেজ ক্বারী শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁনرَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ  বলেন: যারা পান ভক্ষণে বেশি পরিমাণে অভ্যস্থ এবং যাদের দাঁতগুলো বিশেষত ফাঁকা, অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, সুপারীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা এবং পানের ছোট ছোট টুকরা তাদের মুখের ভিতর বিভিন্ন জায়গায় বিশেষত দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে এমনভাবে স্থান দখল করে নেয় যে, সেগুলো তিনবার নয় বরং দশবার কুলি করেও পরিপূর্ণভাবে পরিস্কার করা সম্ভব হয় না। খিলাল বা মিসওয়াক কোন কিছুর দ্বারাই এগুলোকে বের করে আনা যায় না। একমাত্র মুখের ভিতর পানি নিয়ে তা ভালভাবে নাড়া-চাড়া করেই মুখের বিভিন্ন অংশ ও দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে আটকে থাকা পান ও সুপারীর সে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো আস্তে আস্তে বের করে আনা সম্ভব হয়। তাই এ ক্ষেত্রে কুলি করার নির্ধারিত কোন সংখ্যা হতে পারে না এবং এই পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কঠোর তাকিদ দেওয়া হয়েছে। অসংখ্য হাদীসে বর্ণিত আছে: “যখন মানুষ নামাযে দন্ডায়মান হয়, তখন ফিরিশতা তার মুখ ঐ নামাযীর মুখের সাথে লাগিয়ে দেয় এবং মানুষ নামাযের মধ্যে যা কিছু পড়ে তা তার মুখ থেকে বের হয়ে ফিরিশতার মুখে প্রবেশ করে।” তাই নামাযরত অবস্থায় মানুষের দাঁতের ফাঁকে কোন খাদ্যকণা থাকলে তাতে ফিরিশতার এমন কষ্ট হয় যেরূপ কষ্ট অন্য কিছু দ্বারা হয় না।

অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?

রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন তোমাদের কেউ রাতের বেলায় নামাযের জন্য দাঁড়ায়, তখন উচিত হচ্ছে; নামাযের পূর্বে মিসওয়াক করে নেওয়া। কেননা, সে যখন নামাযে কিরাত পাঠ করে, তখন ফিরিশতা তার মুখ ঐ নামাযীর মুখের সাথে লাগিয়ে দেয় এবং নামাযরত অবস্থায় যা কিছু ঐ নামাযীর মুখ থেকে নির্গত হয়, তা ফিরিশতার মুখে প্রবেশ করে।” আল্লামা তাবরানী তার বিখ্যাত গ্রন্থ “কাবীর” এ হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব আনসারী رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ হতে বর্ণনা করেন: “দুজন ফিরিশতার নিকট এর চেয়ে কষ্টদায়ক বস্তু আর কিছুই নেই যে, তারা তার সাথীদের নামাযরত অবস্থায় দেখতে পায়, অথচ তার দাঁতে খাদ্য কণা আটকে রয়েছে।” (আল মুজামুল কবীর, ৪র্থ খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪০৬১। ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ১ম খন্ড, ৬২৪ পৃষ্ঠা, ৬২৫)

সুফী তত্ত্বের মহান মাদানী ব্যবস্থাপত্র

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম আবু হামীদ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ  বলেন: অযু থেকে অবসর হয়ে যখন আপনি নামাযের ইচ্ছা পোষণ করবেন তখন এ ধ্যান করুন যে, যে সকল প্রকাশ্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর মানুষের দৃষ্টি পড়ে ঐগুলোতো পাক হয়ে গেলো কিন্তু অন্তরের পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহ্ তাআলার দরবারে মুনাজাত করা একটা নির্লজ্জতা। কেননা, আল্লাহ্ তাআলা অন্তর দেখেন। তিনি আরো বলেন: প্রকাশ্য অযুকারীর (পবিত্রতা অর্জনকারীর) এ কথা স্মরণ রাখা উচিত যে, অন্তরের পবিত্রতা তাওবা, গুনাহ্ বর্জন ও সুন্দর চরিত্র গঠনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি অন্তরকে পাপের ময়লা থেকে পরিস্কার করে না শুধু বাহ্যিক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য্যরে প্রতি যতœবান হয় তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মত, যে বাদশাহকে তার ঘরে আমন্ত্রণ করলো এবং বাদশাহের আগমন উপলক্ষ্যে তার ঘরের বাইরে খুবই সাজসজ্জা ও চাকচিক্য করলো অথচ ঘরের ভিতর অপরিস্কার, নোংরা ও ময়লা আবর্জনা পূর্ণ রেখে দিল। এখন বাদশাহ তার ঘরে আগমন করে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে যখন ময়লা আবর্জনা ও দুর্গন্ধ দেখতে পাবেন তখন তিনি কি খুশী হবেন না অসন্তুষ্ট হবেন, তা প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তিই সহজে অনুধাবন করতে পারে। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা)

অজু ভঙ্গের কারণ

১.পায়খানা-প্রসাবের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে।
২.মুখ ভরে বমি করলে।
৩.শরীরের ক্ষতস্থান হতে রক্ত,পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
৪.নামাজে উচ্চ-আওয়াজে হাসলে।
৫.পাগল,মাতাল বা অচেতন হওয়া।
৬.চিৎ,কাৎ বা হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া।
৭. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।
৮. স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে উলঙ্গাবস্থায় যদি উভয়ের লজ্জাস্থান শুধু স্পর্শ করে এবং ভিতরে না ঢুকায় অথবা বীযর্পাত না হয় তাতেও অজু ভঙ্গ হবে।
৯. নেশার বস্তু পান করে নেশা-গ্রস্ত বা মাতাল হলে।

অযু সম্পর্কিত ৭টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

(১)  পুরুষ  বা  নারীর  প্রস্রাব  বা  পায়খানার  রাস্তা  দিয়ে  প্রস্রাব, পায়খানা, বীর্য, কৃমি, পাথরি ইত্যাদি বের হলে অযু ভঙ্গ  হয়ে  যাবে। (আলমগিরী,  ১ম    খন্ড, ৯  পৃষ্ঠা)

(২)   পুরুষ বা  মহিলার  পিছনের রাস্তা দিয়ে সামান্যতম বায়ূ  বের  হলেও  অযু  ভঙ্গ  হয়ে  যাবে।  তবে  পুরুষ  বা  মহিলার  মূত্রদ্বার দিয়ে   বায়ু  নির্গত  হলে  অযু  ভঙ্গ  হবে না।    (বাহারে   শরীয়াত,   ১ম   খন্ড,   ৩০৪    পৃষ্ঠা)    

(৩) বেঁহুশ হয়ে পড়লে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম  খন্ড,   ১২  পৃষ্ঠা)

অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?

(৪)  কেউ  কেউ বলে থাকে    শুয়োরের  নাম  নিলে   অযু  ভঙ্গ  হয়ে  যায়।  এটা একটি   ভুল   কথা।   

(৫)    অযু   করার  সময়ে   যদি   বায়ু নির্গত হয়  বা   অন্য  কোন  কারণে অযু  ভঙ্গ   হয়ে  যায়, তাহলে   পুনরায়   নতুনভাবে    অযু    করতে    হবে।   পূর্বে ধৌত  করা   অঙ্গ  সমূহও   পুনরায়   ধৌত   করতে   হবে। (ফতোওয়ায়ে   রযবীয়া  (সংকলিত)  ,   ১ম  খন্ড,   ২৫৫ পৃষ্ঠা)  

(৬)  অযু  ব্যতীত  কুরআন  শরীফ  বা  এর  কোন  আয়াত  বা  যে কোন ভাষায় অনুদিত কুরআন শরীফের অনুবাদ      স্পর্শ     করা      সম্পূর্ণরূপে     হারাম।     (বাহারে শরীয়াত,  ১ম   খন্ড,  ৩২৬-৩২৭   পৃষ্ঠা)    

(৭)   কুরআন  শরীফ  স্পর্শ  না    করে   দেখে  দেখে  বা  মুখস্থ    কুরআন শরীফের কোন আয়াত অযুবিহীন পাঠ করা যাবে।

অজু করার নিয়ম

অজু করার নিয়ম – অজুর   সময়    কা’বা     শরীফের     দিকে    মুখ    করে    উঁচু জায়গায় বসা মুস্তাহাব। অযুর জন্য নিয়্যত করা সুন্নাত। নিয়্যত না করলেও অযু হয়ে যাবে, কিন্তু সাওয়াব পাবে না।   অন্তরের   ইচ্ছাকে  “নিয়্যত”  বলে।  অন্তরে    নিয়্যত করার  সাথে   সাথে  মুখে  উচ্চারণ   করাও  উত্তম।  মুখে  এভাবে    নিয়্যত     করুন    যে,    আমি   আল্লাহ্    তাআলার নির্দেশ   পালনার্থে      পবিত্রতা   অর্জন   করার   জন্য   অযু করছি। بِسْمِ الله  পড়ে নিন”। এটাও সুন্নাত। বরং بِسْمِ اللهِ  وَالْحَمْدُ لِلّٰه বলে নিন। এর  কারণে   আপনি   যতক্ষণ  অযু   অবস্থায়     থাকবেন   ততক্ষণ   ফিরিস্তাগণ   আপনার জন্য   নেকী   লিখতে  থাকবেন।  (আল  মু’জামুস  সগীর  লিত তাবারানী, ১ম খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৮৬)

এখন উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার করে ধৌত করুন। (পানির   নল   বন্ধ   করে)   উভয়   হাতের   আঙ্গুলগুলোও  খিলাল করে নিন। কমপক্ষে তিনবার করে ডানে বামে, উপরে    নিচে    দাঁতগুলো   “মিসওয়াক   করুন।    প্রত্যেক বারে  মিসওয়াক  ধুয়ে    নিন।  হুজ্জাতুল  ইসলাম  ইমাম  মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ  বিন    মুহাম্মদ  গাযালী   رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی  عَلَیہِ     বলেন:    মিসওয়াক   করার  সময়   নামাযে  ক্বিরাত   পাঠ   ও   আল্লাহর   যিকিরের   জন্য   মুখ   পবিত্র  করার  নিয়্যত  করা  উচিত।”     (ইহ্ইয়াউল    উলুম,  ১ম  খন্ড,    ১৮২   পৃষ্ঠা)  অতঃপর   ডান   হাতে  তিন    অঞ্জলী পানি      নিয়ে     (প্রতি      বারে     পানির     নল     বন্ধ     করে) এমনভাবে তিনবার কুলি করবেন যেন প্রতিবারে মুখের ভিতরের পুরো জায়গায় পানি প্রবাহিত হয়। রোজাদার না  হলে  গড়গড়াও করে  নিন। 

অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? অজু ভঙ্গের কারণ ? স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয় ? অজু ও গোসলের ফরজ ?

তারপর ডানহাতেরই তিন অঞ্জলী পানি (প্রতিবারে আধা অঞ্জলী পানি যথেষ্ট) দিয়ে (প্রতিবারে পানির নল বন্ধ করে) তিনবার নাকের ভিতর নরম মাংস পর্যন্ত পানি পৌঁছাবেন। রোযাদার না হলে নাকের  মূল  (গোড়া)  পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে দিন।   বাম   হাতের   সাহায্যে  নাক  পরিষ্কার    করে  নিন   এবং ছোট আঙ্গুল নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করান। তিনবার পুরো মুখমন্ডল এমনভাবে ধুয়ে নিন, যেখান থেকে স্বাভাবিক ভাবে   মাথার  চুল  গজায়    সেখান  থেকে  চিবুকের  নিচ  পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অপর  কানের লতি পর্যন্ত  পুরো  সীমায়  পানি  প্রবাহিত  করুন।  

যদি  দাঁড়ি  থাকে    এবং   আপনি   ইহরাম   পরিধানকারী    না    হউন, তাহলে   (পানির   নল বন্ধ করে)   এভাবে দাঁড়ি  খিলাল করুন     যে,   আঙ্গুল    গুলো    গলার    দিক   থেকে    প্রবেশ করিয়ে     সামনের     দিক     থেকে     বের     করিয়ে     দিন।  অতঃপর   আঙ্গুলের    মাথা    থেকে  শুরু  করে   কনুই  সহ  তিনবার   ডান    হাত  ধৌত   করুন,  এভাবে   বাম  হাতও ধৌত করুন। উভয়হাত অর্ধ বাহু  পর্যন্ত ধোয়া মুস্তাহাব।  {অধিকাংশ   লোক অঞ্জলিপূর্ণ  পানি  নিয়ে  হাতের কোষ হতে  তিনবার  এমনভাবে পানি ছেড়ে  দেয় যেন কনুই পর্যন্ত   পানি  প্রবাহিত  হয়ে   যায়।   

এরকম   করা   উচিত নয়।   কারণ  এতে  কনুই  ও   বাহুর   চতুর্পাশ্বে    পানি  না পৌঁছার  আশঙ্কা  থাকে।  অতএব   বর্ণিত  নিয়মেই   হাত ধৌত    করবে।      এতে    কনুই    পর্যন্ত    অঞ্জলীপূর্ণ    পানি প্রবাহিত   করার   প্রয়োজন  নেই   বরং   (শরয়ী  অনুমতি  ছাড়া) এরকম করা পানির অপচয়।}অতঃপর  (পানির নল  বন্ধ  করে)    মাথা  মাসেহ  এভাবে  করুন      যে,   দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি ও শাহাদাত আঙ্গুলীদ্বয়  বাদ দিয়ে দুই হাতের বাকি তিন তিন আঙ্গুল সমূহ পরস্পর মিলিয়ে নিন এবং কপালের  চুল   অথবা   চামড়ার   উপর   রেখে  পিছনের  অংশ পর্যন্ত এমনভাবে  টেনে নিয়ে যাবেন যেন  হাতের  তালুগুলো  মাথা  থেকে   পৃথক  থাকে।   

তারপর  হাতের তালুগুলো   পিছন থেকে কপাল পর্যন্ত   এমনভাবে টেনে আনবেন   যেন বৃদ্ধাঙ্গুলী ও শাহাদাত  আঙ্গুলীদ্বয়  মাথার সাথে স্পর্শ না হয়। অতঃপর শাহাদাত আঙ্গুলীদ্বয় দ্বারা দুই   কানের    ভিতরের    অংশ    এবং    বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়   দ্বারা  কানের         বাহিরের         অংশ         মাসেহ           করুন         এবং কনিষ্ঠাঙ্গুলীদ্বয়   দুই  কানের     ছিদ্রে  প্রবেশ  করিয়ে  দিন এবং আঙ্গুলগুলোর    পিঠ  দিয়ে ঘাড়ের   পিছনের অংশ মাসেহ করুন। কিছু কিছু লোক গলা ধৌত করে, হাতের কনুই   ও   কব্জিদ্বয়    মাসেহ     করে   থাকেন।    এটা   কিন্তু সুন্নাত   নয়।     মাথা     মাসেহ   করার   পূর্বে   পানির    নল   ভালভাবে   বন্ধ  করার    অভ্যাস   গড়ে  তুলুন।   

অনর্থক পানির     নল   খোলা     রাখা    কিংবা   অর্ধেক   বন্ধ   রাখার (কারণে  ফোঁটা  ফোঁটা পানি ঝরতে থাকে)  এটা  গুনাহ্  ও অপচয়।  অতঃপর  প্রথমে ডান পা, তারপর বাম পা  প্রত্যেকবার       আঙ্গুল      হতে      শুরু      করে        গোড়ালির উপরিভাগ  পর্যন্ত  তিনবার  ধৌত     করুন।তবে    মুস্তাহাব হলো,   অর্ধ  গোছা  পর্যন্ত   তিনবার    ধৌত    করা।  উভয়  পায়ের   আঙ্গুল   সমূহ   খিলাল   করা   সুন্নাত।   

খিলালের  সময়   পানির   নল  বন্ধ  রাখুন।    পায়ের  আঙ্গুল   খিলাল করার  মুস্তাহাব  পদ্ধতি   হচ্ছে,   বাম  হাতের   কনিষ্ঠাঙ্গুল দ্বারা   প্রথমে   ডান   পায়ের   কনিষ্ঠাঙ্গুল   থেকে   বৃদ্ধাঙ্গল  পর্যন্ত  তারপর  সে  বাম  হাতেরই  কনিষ্ঠাঙ্গুল  দ্বারা  বাম  পায়ের বৃদ্ধাঙ্গল থেকে   কনিষ্ঠাঙ্গুল পর্যন্ত   খিলাল   করা। হুজ্জাতুল   ইসলাম    ইমাম    মুহাম্মদ   বিন   মুহাম্মদ   বিন মুহাম্মদ  গাযালী  رَحۡمَۃُ  اللّٰہ   ِتَعَالٰی  عَلَیہِ  বলেন:  “অযুর  মধ্যে প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করার সময় যেন এ আশা করা হয়    যে,   আমার   এ   অঙ্গের   গুনাহ্   বের     হয়ে   (ঝরে) যাচ্ছে।” (ইহ্ইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা)

স্বপ্নে অজু করতে দেখলে কি হয়

আল্লাহ মুমিন ব্যক্তিদেরকে অনেকবার স্বপ্নের মাধ্যমে সতর্ক করেন। আবার স্বপ্ন কখনো কখনো শয়তানেরও হতে পারে। আল্লাহ স্বপ্নের মাধ্যমে বান্দাদেরকে অনেক ধরনের বাণী বা উপদেশও দিয়ে থাকেন।

স্বপ্নে যদি কোন ব্যক্তি নিজেকে প্রবাহিত পানিতে অযু করতে দেখেন, তাহলে চুরি হওয়া জিনিস ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের আশা করা প্রায়শই বোকামি কারণ আমরা চুরি হয়ে যাওয়ার পরে সেই জিনিসটি ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দেই।

হারানো জিনিস পুনরুদ্ধার প্রতিটি ব্যক্তির জন্য একটি সুখবর বলা যেতে পারে। তাই তাকে প্রবাহিত পানিতে অযু করতে দেখা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একটি শুভ লক্ষণ বলা হয়। পক্ষান্তরে কেউ যদি নোংরা পানিতে অযু করে তবে তা তার জন্য শুভ লক্ষণ নয়। আর অযু ছাড়া নামায পড়লে বুঝতে হবে যে ব্যক্তি কোন বিনিয়োগ ছাড়াই ব্যবসায়ী হিসেবে লাভবান হবে।

অজু করার দোয়া

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আরবি-উচ্চারন
بِسْمِ اللهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ، وَالْحَمدُ لِلَّهِ عَلَى دِيْنِ الاِْسْلاَمِ، اَلاِْسْلاَمُ حَقٌّ وَالْكُفْرُ بَـاطِلٌ، اَلاِْسْلاَمُ نُوْرٌ وَالْكُفْرُظُلْمَةٌ

বাংলা-উচ্চারন
বিছমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম, আলহামদু লিল্লাহি আলা দ্বিনীল ইসলাম। আল ইসলামু হাককুও ওয়াল কুফরু বাতিলুন। আল ইসলামু নূরুও ওয়াল কুফরু জুলম্যতুন।

বাংলা অর্থ
মহান ও সর্ব সৃষ্টিকর্তার আল্লাহর পাকের নামে আরম্ভ করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালারই জন্য যিনি আমাকে দ্বীন ইসলামের ওপর রেখেছেন। ইসলাম সত্য ও সঠিক এবং কুফুরি মিথ্যা। ইসলাম আলোকময় এবং কুফুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন।

অজু ও গোসলের ফরজ

গোসলের অজুই যথেষ্ট

গোসলের  জন্য যে অজু করা হয়, সেটাই যথেষ্ট, যদিও উলঙ্গাবস্থায়       গোসল     করে     থাকে।     গোসলের     পর  দ্বিতীয়বার  অযু  করা  জরুরী  নয়।  যদি  গোসলের  পূর্বে  অযু   নাও   করা   হয়,   তবুও   গোসলের   মাধ্যমে   অযুর  অঙ্গসমূহে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে অযু হয়ে যায়, নতুনভাবে       অযু       করার       দরকার       নেই। কাপড়  পাল্টানোর কারণে অজু ভঙ্গ হয় না।

মেয়েদের অজু ভঙ্গের কারণ

পুরুষদের অজু ভঙ্গের কারণ এবং মহিলাদের অজু ভঙ্গের কারণ একই । বিস্তারিত দেখুন অজু ভঙ্গের কারণ অংশে ।

অজু ভঙ্গের কারণ ৭টি

তাহিয়াতুল অজু

অজু ভঙ্গের কারণ কয়টি ? অজু ভঙ্গের কারণ মূলত ৭টি উপরের অংশ বিষয়টি বিস্তারিত জানতে পারবেন ।

Advertisements

1 COMMENT

Leave a Reply