Table of Contents
সূরা কাওসার – বাংলা অর্থ উচ্চারণ ও ফযিলত। Surah Al-Kauthar
আল্লাহ্ তা’আলা কোরআন মজীদে এরশাদ করেছেন-
ِنَّآ أَعْطَيْنَـٰكَ ٱلْكَوْثَرَ ١ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ ٢ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلْأَبْتَرُ ٣
Surah Al-Kauthar
إِنَّآ أَعْطَيْنَـٰكَ ٱلْكَوْثَرَ ١ |
১. হে মাহবুব! নিশ্চয় আমি আপনাকে অসংখ্য গুণাবলী দান করেছি। |
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ ٢ |
২. সুতরাং আপনি আপনার রবের জন্য নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন; |
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلْأَبْتَرُ ٣ |
৩. নিশ্চয় যে আপনার শত্রু, সে-ই সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। |
সূরা কাওসার – বাংলা অর্থ
তরজমা:
১. হে মাহবুব! নিশ্চয় আমি আপনাকে অসংখ্য গুণাবলী দান করেছি।
২. সুতরাং আপনি আপনার রবের জন্য নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন;
৩. নিশ্চয় যে আপনার শত্রু, সে-ই সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।
[সূরা কাউসার, আয়াত ১-৩, কানযুল ঈমান]
কাউসার বলতে কি বুঝায় ?
অভিধানে কাউসার (ٌلَعْوَف – كوثر এর সমুচ্চারিত। বস্তুর – আধিক্যকে (কাউসার) বলা হয়। সুতরাং আয়াত শরীফ থেকে বুঝা গেলো যে, আল্লাহ্ তা’আলা আপন মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে প্রত্যেক প্রকারের আধিক্য দান করে সেগুলোর মালিক করে দিয়েছেন। আওলাদে আধিক্য, যাহেরী ও বাতেনী মর্যাদায় আধিক্য, ইলম ও আমলে আধিক্য, ভান্ডারে প্রাচুর্য, সালতানাত ইত্যাদিতে আধিক্য ।
খাস পরিভাষায় (কাউসার) ওই হাউয়কে বলা হয়, যা কিয়ামতের দিনে আল্লাহ্ তা’আলা আপন হাবীবে পাক সাহিবে লাউলাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দান করেছেন। সুতরাং মাদানী চাঁদ মি’রাজের রাতে হাউযে কাউসার’কে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন, পরিদর্শন করেছেন।
[তাফসীর-ই আযীযী: পারা ৩০, পৃষ্ঠা ২৮৬]
ইমাম বোখারী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি সাইয়্যেদুনা হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, তাজদারে মদীনা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি (শবে মি’রাজে) জান্নাতে ভ্রমণ করছিলাম, আমি এক নহরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যার দু’পাশে মধ্যখানে খালি মুক্তার অনেক গম্বুজ ছিলো। আমি বললাম, “হে জিব্রাঈল! এটা কি?” তিনি আরয করলেন, “এটা হাউযে কাউসার ।
এটা আপনার দয়ালু রব আপনাকে দান করেছেন। সেটার মাটি খুশবুদার ।”
হাউযে কাউসারের মিষ্ট পানি
হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর হাউযে কাউসারের পানি ঠান্ডা ও মিষ্ট । যখন হুযূর-ই আবদাস সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর গোলাম তা পান করবেন, তার পর আর কখনো পিপাসার্ত হবেন না ।
কবির ভাষায়-
ঠান্ডা ঠান্ডা, মিষ্ট মিষ্ট; পান করি আমরা, পান করান তিনি ।
ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিম সাইয়্যেদুনা হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, সুলতানে দারাঈন সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- “আমার হাউযের দূরত্ব (দৈর্ঘ্য) এক মাসের রাস্তা, সেটার কোনগুলো সমান অর্থাৎ চতুর্ভূজি। সেটার পানি দুধ অপেক্ষা সাদা, সেটার খুশবু কস্তুরি থেকে বেশী উৎকৃষ্ট, আর সেটার পেয়ালাগুলোর সংখ্যা আসমানের তারকার সংখ্যার সমান হবে । যে ব্যক্তি সেটার পানি পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না ।
সূরা কাওসার
সূরা কাওসার বাংলা অর্থসহ
সূরা কাওসার বাংলা উচ্চারণ
সূরা কাওসার বাংলা
সূরা কাওসার এর ফজিলত
সূরা কাওসার এর অর্থ
সূরা কাওসার এর তাফসীর
সূরা কাওসার এর শানে নুযুল
সূরা কাওসার দিয়ে বশীকরণ
সূরা কাওসার এর ব্যাখ্যা
সাক্বী-ই কাউসার
ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিম সাইয়্যেদুনা সাহল ইবনে সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- সাইয়্যেদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- “আমি হাউযে কাউসারের নিকট তোমাদের অগ্রণী হবো। যে ব্যক্তি আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে সে (হাউষের) পানি পান করবে । আর যে পান করবে সে কখনো পিপাসার্ত হবে।
কিছু সম্প্রদায় আমার নিকট আসবে, যাদেরকে হয়তো আমি চিনবো, তারাও হয়তো আমাকে চিনে। তার পর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে। তখন আমি বলবো, “নিশ্চয় তারা আমার ।” তখন বলা হবে, “আপনি তাদেরকে (নিজ থেকে) জানেন না, যারা (দ্বীনে) নতুন নতুন ভিত্তিহীন আক্বীদা ও কর্মকান্ড আবিষ্কার করেছে- আপনার পর।” তখন আমি বলবো, ধ্বংস হোক, ধ্বংস। হোক তারা, যারা আমার পর আমার দ্বীনকে বদলে ফেলেছে।
এ হাদীস শরীফ থেকে এও প্রতীয়মান হয় যে, যেসব লোক দ্বীন-ই ইসলামে পরিবর্তন এনেছে, অগ্রণী ওলামা-ই দ্বীনের (সলফে সালেহীন) সহীহ-সঠিক রাস্তা পরিহার করে অন্য রাস্তা ধরে চলে গেছে, তারা যত ইবাদতই করুক না কেন, সাইয়্যেদুনা আপাদমস্তক নূর, শাফে-ই ইয়াউমান নুশূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বিদ্রোহী
‘হাউযে কাউসার’ থেকে যারা পান করতে
পারবে না!
শাহানশাহে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ‘হাউয’ (হাউযে কাউসার) থেকে অন্য নবীগণ (আলায়হিমুস্ সালাম)-এর উম্মতদেরকে পানি পান করাবেন না, যাতে তারা নিজ নিজ নবীর ‘হাউফ’ থেকে পানি পান করে । অনুরূপ ওইসব লোককেও নিজের হাউযে কাউসার থেকে পানি পান করাবেন না, যারা বদ-আক্বীদা (যারা ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণকারী) হবে ।
[মাদারিজুন নবুয়ত: প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩২৪]
আরো যাঁরা কিয়ামতে সাক্বী হবেন
সাইয়্যেদুনা হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হাদীস-ই পাকে বর্ণিত, শাহানশাহে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, হাউযে কাউসারের চারটি স্তম্ভ (রুকন) আছে: প্রথম স্তম্ভ (রুকন) সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হাতে থাকবে, দ্বিতীয়টা থাকবে সাইয়েদুনা হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হাতে। আর তৃতীয় রুকন থাকবে সাইয়্যেদুনা হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হাতে এবং চতুর্থটি থাকবে হযরত সাইয়্যেদুনা আলী মুরতাদ্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হাতে।
সুতরাং যে ব্যক্তি সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর বন্ধু হয়, কিন্তু সাইয়্যেদুনা হযরত ওমর ফারূক্কের দুশমন হবে, তাকে সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ওই হাউয থেকে পান করতে দেবেন না। আর যে ব্যক্তি সাইয়্যেদুনা হযরত আলী মুরতাদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে ভালবাসবে, আর সাইয়্যেদুনা ওসমান গণী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সাথে দুশমনী করবে, তাকে সাইয়্যেদুনা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হাউয থেকে পানি পান করাবেন না । এ হাদীস শরীফ হযরত আবূ সাঈদ ‘শরফুন নুবূয়ত’-এ উল্লেখ করেছেন, অনুরূপভাবে এটা মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’য়ও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রসিদ্ধি আছে যে, সাক্কী-ই কাউসার মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুও হবেন । মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন, যে ব্যক্তি সাইয়্যেদুনা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আন্হুকে শত্রু মনে করবে, আমি তাকে হাউযে কাউসারের পানি পান করতে দেবো না।
[মাদারিজুন নুবূয়বত: প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩২০]
আ’লা হযরত এদিকে ইঙ্গিত করে লিখেন-
অর্থ: হযরত আলী মুরতাদা আল্লাহর সিংহ, বাহাদুরদের বাহাদুর।
তিনি (কিয়ামতে) মিষ্ট দুধ ও শরবত পান করাবেন।
তাঁর প্রতি লাখো সালাম ।
ফজিলত পূর্ণ দরুদে তাজ শরীফের ফযীলত বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ সহ পড়তে ক্লিক করুন।
হাউসে কাউসারের বর্ণনা
ইমাম মুসলিম হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, শাহে কাওন ও মকান সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “আমার ‘হাউ’-এর উভয় তীরের মধ্যে ব্যবধান হবে ‘আয়লা’ থেকে ‘আদন পর্যন্তের চেয়ে বেশী। হাউযের পানি বরফের চেয়েও সাদা, মধু ও দুধের সাথে মিশ্রিত পানীয় অপেক্ষাও বেশী মিষ্ট। সেটার পান-পাত্রের সংখ্যা হবে আসমানের তারাগুলো থেকেও বেশী। আর নিশ্চয় আমি ভ্রান্ত আক্বীদার লোকদের তা থেকে পান করতে বাধা দেবো, যেভাবে লোকেরা নিজেদের হাউয থেকে অন্য লোকদের উটগুলোকে রুখে দেয়। সাহাবা-ই কেরাম আরয করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কি ওই দিন আমাদেরকে চিনবেন?” হুযূর-ই আকরাম এরশাদ করলেন, হাঁ। তোমাদের বিশেষ নিশানা (আলামত) থাকবে, যা অন্য উম্মতদের থাকবে না। তোমরা আমার হাউয়ের নিকট এভাবে আসবে যে, তোমাদের কপালগুলো, ওযূর চিহ্নের কারণে সাদা ও চমকদার হবে।” এটা ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিমের অন্য বর্ণনা হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে এভাবে রয়েছে, হুযূর-ই আকরাম এরশাদ করেছেন, “হাউয়ের পাশে পান পাত্রগুলো স্বর্ণ ও চাঁদীর হবে।”
ইমাম মুসলিম অন্য বর্ণনায় হযরত সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে এভাবে রয়েছে- তিনি বলেন, যখন এর পানি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তখন হুযূর-ই আকরাম এরশাদ করেছেন- দুধের চেয়ে বেশী সাদা, মধুর চেয়েও বেশী মিষ্ট। তাতে জান্নাত থেকে দু’টি প্রণালী এসে মিলিত হয়, প্রণালী দু’টি সেটাকে সাহায্য করে, অর্থাৎ পানি বৃদ্ধি করে, একটি প্রণালী স্বর্ণের, আরেকটি রূপার । এ হাদীস শরীফ থেকে বুঝা যায় যে, বে-নামাযীরা হতভাগা। এ হাদীস শরীফে এও এরশাদ হয়েছে যে, যেসব লোক ওযূ করে, নামায পড়ে, তাদের জন্য এ আলামত থাকবে যে, ওযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সাদা ও চমকদার হবে, যা দেখে হুযূর-ই আকরাম তাদেরকে চিনবেন এবং হাউযে কাউসারের পানি পান করাবেন।
পক্ষান্তরে, বে-নামাযীরা তা থেকে বঞ্চিত হবে। কেননা, যখন তারা নামাযই পড়ে না, তখন তারা ওযূ করবে কেন? যখন ওযূর চিহ্ন চেহারায় থাকবে না, তখন আলো ও চমক কোত্থেকে আসবে, যার কারণে তারা অন্য উম্মতদের থেকে পৃথক বা আলাদাভাবে পরিচিত হবে? ওই সব বে-নামাযীর জন্য আফসোস! কারণ, তারা তাদের আলস্য ও উদাসীনতার কারণে কিয়ামতের দিন এমন মহা নি’মাত থেকে বঞ্চিত থাকবে। তাই আমার উদাত্ত আহ্বান: নিয়মিতভাবে যথাযথভাবে নামায কায়েম করুন! ফলে আল্লাহর অগণিত নিমাতের উপযোগী হবে এবং জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন ও অসহনীয় শাস্তি থেকে নিরাপদ হোন ।
তথ্য সংগ্রহঃ মাসিক তরজুমানে আহলে সুন্নত
নিয়মিত তরজুমান -এ- আহলে সুন্নত পড়ুন।