এখনো সচল হজরত ওসমানের (রা) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

0
129
এখনো সচল হজরত ওসমানের (রা) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
এখনো সচল হজরত ওসমানের (রা) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
Advertisements
5/5 - (1 vote)

এখনো সচল হজরত ওসমানের (রা) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

নবী মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াতের ১৩তম বছর। মুসলমানরা সবেমাত্র মক্কা ছেড়ে মদিনায় এসেছে। অপরিচিত পরিবেশে মিঠা পানির তীব্র ঘাটতি দেখা দেয়।

মদীনায় একটি ইহুদি কূপ ছিল যার নাম ‘বিরেরুমা’ বা রুমার কূপ। এ উপলক্ষে ইহুদিরা মুসলমানদের কাছে কূপের পানি চড়া দামে বিক্রি করে।

এখনো সচল হজরত ওসমানের (রা) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বিষয়ে অবহিত করলে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে মুসলমানদের জন্য এই কূপ ক্রয় করবে? যে ব্যক্তি মুসলমানদের জন্য এই কূপটি ক্রয় করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে একটি ঝর্ণা দান করবেন।

Advertisements
এখনো সচল হজরত ওসমানের (রা) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
এখনো সচল হজরত ওসমানের (রা) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

হজরত উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথায় ইহুদির কাছ থেকে এই কূপটি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইহুদী তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে সে বলল, “যদি তুমি পুরো কূপটি বিক্রি না কর, তবে তার অর্ধেক বিক্রি করে দাও।” একদিন আমি কূপের মালিক হবো আর একদিন তুমি হবে। উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) অর্ধেক কূপ কিনে বিনামূল্যে পানি বিতরণ শুরু করলেন। লোকেরা উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) দ্বারা কেনা নির্দিষ্ট দিনে পানি সংগ্রহ করত এবং পরের দিনের জন্যও যথেষ্ট পরিমাণে সংরক্ষণ করত।

ইহুদির সময়ে কেউ পানি সংগ্রহ করতে যেত না। ফলে তার পানির ব্যবসা কমে যায় এবং তিনি নিজেই উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে পুরো কূপ বিক্রি করার প্রস্তাব দেন।

হযরত ওসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ৩৫ হাজার রৌপ্য মুদ্রায় কূপটি ক্রয় করে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দেন। তখন এক ধনী ব্যক্তি উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছ থেকে দ্বিগুণ দামে কূপটি কিনতে চাইলে তিনি বললেন, আমার চাহিদা এর চেয়ে অনেক বেশি। লোকটা দাম বাড়াতে লাগলো। উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর চেয়েও বেশি কিছু আমাকে বলে উত্তর দিলেন। অবশেষে ধনী লোকটি বলল, কেউ কি আছে যে তোমাকে কূপের দাম ১০ গুণ বলেছে? উসমান (রা.) উত্তরে বললেন, আমার আল্লাহ আমাকে বলেছেন প্রত্যেক নেক আমলকে দশগুণ করে দিতে।

হযরত ওসমান (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর শাসনামলে এই কূপের চারপাশে খেজুর বাগান তৈরি করা হয়েছিল। অনেক উত্থান-পতনের পর সৌদি রাজপরিবার সৌদি আরবের সিংহাসনে আরোহণ করলে এই বাগানে খেজুর গাছের সংখ্যা ১৫৫০-এ পৌঁছে। সরকার বাগানের চারপাশে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে। এই জমিটি ওসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর নামে দলিল করা হয়েছিল এবং তাঁর নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল।

আরো পড়ুন : প্রতিদিনের শিক্ষামূলক ছোট হাদিস | স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ-বিচ্ছেদ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে #৯

এটি একটি আশ্চর্যজনক সত্য যে সৌদি আরবে এখনও তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর নামে সম্পত্তির দলিল রয়েছে। একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। আরও মজার ব্যাপার হলো, মাস পেরিয়ে গেলেও গ্যাস-বিদ্যুতের বিল আসে তার নামে। সম্প্রতি ওসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল হোটেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে!

আরো পড়ুন : জানাজা নামাজের নিয়মাবলী | জানাযার নামাযের পদ্ধতি (হানাফী)

সৌদি কৃষি মন্ত্রণালয় এই বাগান থেকে খেজুর বিক্রি থেকে অর্জিত অর্থ ওসমানের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) অ্যাকাউন্টে জমা করে। সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মদীনায় একটি বড় সম্পত্তি ক্রয় করা হয়। যেখানে ‘হোটেল ওসমান বিন আফফান’ নামে একটি আবাসিক হোটেল তৈরি করা হয়েছে। সৌদি সরকার হোটেল থেকে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন রিয়াল আয় করবে বলে আশা করছে। যার নামফলকে লেখা ‘মালিক সাইয়্যিদুনা উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। যেহেতু এটি তার ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নির্মিত হয়েছিল, তাই মালিক হিসাবে শুধুমাত্র তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

হোটেলটির নির্মাণ কাজ ২০১৪-১৫ সালে সম্পন্ন হয়। হোটেলের আয়ও উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর অন্যান্য সম্পদের মতো এতিম ও দরিদ্রদের জন্য দান করা হয় এবং আরেকটি অংশ তাঁর নামে পরিচালিত অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। এর অর্ধেক অর্থ দরিদ্র মানুষের সেবায় ব্যয় করা হয় এবং অর্ধেক হজরত ওসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। আল্লাহ উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর এই দানকে এমনভাবে কবুল করেছেন যে তা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হিসাব আখিরাতে পুরস্কার জমা করছে এবং দুনিয়ার হিসাব-নিকাশের ভারসাম্য নষ্ট হয় না।

Advertisements

Leave a Reply