Table of Contents
কিডনিতে পাথর কেন হয় ? Why do kidney stones occur ?
কিডনি আমাদের শরীরের বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের সাথে বের করে দেয়। কখনও কখনও বিভিন্ন খনিজ লবণের সাথে মিশে কিডনিতে শক্ত পদার্থ তৈরি করে, যাকে আমরা কিডনিতে পাথর বলে থাকি। এই পাথরগুলি লবণের দানার মতো ছোট বা কখনও কখনও পিং-পং বলের মতো বড় হতে পারে। আমরা সহজে এই পাথরের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারি না যতক্ষণ না এটি আমাদের মূত্রনালীতে আঘাত করে এবং এটি সংকীর্ণ হওয়ার কারণে ব্যথার কারণ হয়।
Yashoda Hospitals এর মতে, কিডনিতে পাথর বা রেনাল ক্যালকুলি কিডনি বা মূত্রনালীতে শক্ত, স্ফটিকের মতো খনিজের উপস্থিতিকেই বুঝায় । পাথরের অবস্থানের উপর নির্ভর করে, অবস্থাটিকে আরও বলা হয়:
আমাদের প্রস্রাবে পানি, লবন ও খনিজ পদার্থের সঠিক ভারসাম্য বজায় না থাকলে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
বিভিন্ন কারণে আমাদের প্রস্রাবের উপাদানের এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যেমন-
- প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমান পানি পান করা।
- মাত্রাতিরিক্ত আমিষ/প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
- অতিরিক্ত খাবার লবন (সোডিয়াম সল্ট/টেবিল সল্ট) গ্রহণ।
- অতিরিক্ত অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ যেমন চকলেট।
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ অথবা বাতের ব্যথা কিংবা মূত্রাশয়ে প্রদাহের উপযুক্ত চিকিৎসা না করা।
কিডনিতে পাথর কেন হয় ? Why do kidney stones occur ?
কিছু কিছু রোগ যেমন গ্যাষ্ট্রিক, বাইপাস সার্জারী, ইনফ্লামেটরি বাউল ডিজিস, ক্রণিক ডায়রিয়া, হাইপার প্যারাথাইরয়েড, মূত্রনালীর সংক্রমণ ইত্যাদি কিডনি পাথর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- কিডনিতে পাথর,
- কিডনিতে পাথর হলে বোঝার উপায়,
- কিডনিতে পাথর হলে কি ওষুধ খেতে হবে,
- কিডনিতে পাথর কেন হয়,
- কিডনিতে পাথর হলে কি ব্যায়াম করতে হবে,
- কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ,
- কিডনিতে পাথর হলে কি খেতে হবে,
- কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি,
- কিডনিতে পাথর হলে কি খাওয়া যাবে না,
- কিডনিতে পাথর হলে কি কি সমস্যা হয়,
কিডনির পাথর সম্পর্কে সজাগ থাকুন, আপনার নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এই অযাচিত সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারে।
কিডনিতে পাথর: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা
কিডনিতে পাথর নির্ণয় – কিডনিতে পাথর হলে বোঝার উপায়
প্রথমত, রোগের ইতিহাস জানতে হবে। আগে কখনো কিডনি বা মূত্রতন্ত্রে পাথর ধরা পড়েছিল কি না, বর্তমানে ব্যথা থাকলে, এর প্রকৃতি ইত্যাদি জানতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অক্সালেট ও সিসটিনের পরিমাণও দেখা হয়। পাথর দ্বারা কিডনির কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না তা জানার জন্য রক্তের ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন করার প্রয়োজন হতে পারে। শতকরা ৪ থেকে ৫ ভাগ ক্ষেত্রে প্যারা থাইরয়েড গ্রন্থি ও ভিটামিন ডি-এর আধিক্যে সারকয়েডসিস নামক রোগ অথবা অস্থির অসুখের কারণে পাথর হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ওই রোগের ভিত্তির ওপর নির্ভর করে করতে হয়।
Watch the video
কিডনি, মূত্রনালী ও মূত্রথলির পাথর; কারণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা
দ্বিতীয়ত, কিছু পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে এক্স-রে ও আলট্রাসাউন্ড। অনেক ক্ষেত্রে কিডনির পাথর নীরব থাকে। উপসর্গবিহীন অবস্থায় পাথর নির্ণয় করতে হলে আলট্রাসনোগ্রাম অত্যন্ত জরুরি।
তৃতীয়ত, প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করে কিডনির কার্যকারিতা সম্পর্কে জানা দরকার। প্রয়োজনবোধে সঠিক চিকিৎসার জন্য পাথর কোথায় অবস্থান করছে, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য আইভিইউ এক্স-রে বা হেলিকেল সিটিস্ক্যান করা যেতে পারে।
কিডনিতে পাথর কেন হয় হলে করণীয় কী ? কিডনিতে পাথর হলে কি ওষুধ খেতে হবে ?
চতুর্থত, পাথর ধরার পর প্রস্রাব পরীক্ষা করে তাতে লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা, যাচ্ছে কি না দেখা হয়ে থাকে। শ্বেতকণিকা বেশি গেলে প্রস্রাব কালচার করিয়ে নিতে হয়। কী কারণে পাথর হয়েছে তা জানার জন্য রক্তের ক্যালসিয়াম ফসফেট এবং ইউরিক এসিড এবং ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাবের কী পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ইউরিক এসিড বেরিয়ে যাচ্ছে তা নির্ণয় করা হয়। এই পরীক্ষা মূলত পাথর প্রতিরোধের জন্য দরকারি।
যাদের কিডনিতে পাথর বেশি হয়
মূত্রনালীর যত রোগ আছে, এর মধ্যে পাথরজনিত রোগ সবচেয়ে বেশি। প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন কিডনির পাথরে ভোগেন। এই পাথর আকারে ক্ষুদ্র শস্যদানা থেকে শুরু করে টেনিস বল আকৃতির পর্যন্ত হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেই ছোট পাথরগুলো প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়। তবে কিডনির পাথর সাধারণত আকারে ছোট হয়ে থাকে। কিডনির ভেতরে কঠিন পদার্থ জমা হয়ে পাথর হয়। সাধারণত খনিজ এবং অম্ল লবণ দিয়ে কিডনির পাথর তৈরি হয়।
কিডনিতে পাথর হলে কি খাওয়া যাবে না
নারীদের তুলনায় পুরুষদের পাথর হওয়ার হার বেশি (৩:১)। ৪০ বছরের পর থেকে পুরুষদের পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। আর ৭০ পর্যন্ত বাড়তেই থাকে। নারীদের ক্ষেত্রে তা ৫০ বছর বয়স থেকে বাড়তে থাকে। তবে যেকোনো সময়ে যে কারও কিডনি বা মূত্রনালীতে পাথর হতে পারে। এ ছাড়া যাদের একাধিকবার পাথর হয়েছে, তাদের বারবার হতে পারে। যাদের প্রস্রাবের প্রদাহ বেশি হয়, টিউবুলার অ্যাসিডোসিস রয়েছে তাদেরও হতে পারে। টিউবুলার অ্যাসিডোসিস একটি বংশগত রোগ। এই রোগীর ৭০ শতাংশেরই কিডনিতে পাথর হয়।
কিডনিতে পাথর হলে যা খাবেন না
কিডনিতে পাথর হলে যে খাবার পরিহার করা উচিত
- বেশী অক্সালেটযুক্ত খাবার যেমন-পালংশাক, বীট, মিষ্টি আলু, চা, চকোলেট এবং সয়াজাতীয় খাদ্য পরিহার করুন।
- খাবারে লবণ কম ব্যবহার করা এবং পরিমাণে অল্প প্রাণীজ আমিষ গ্রহণ করা।
- ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া তবে ক্যালসিয়াম সম্পুরকের ক্ষেত্রে সতর্কতা মেনে চলা।
ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার খেলে ক্যালসিয়াম পাথর বেশি হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, খাবারের সঙ্গে ক্যালসিয়াম খাদ্যনালিতে পাথর সৃষ্টিকারী অক্সালেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পায়খানার সঙ্গে বের করে দেয়। কাজেই ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার, যেমন- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া যাবে। তবে যাদের একটি কিডনিতে একবার পাথর হয়েছে, তাদের অপ্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ও ভিটামিন ডি খাওয়া একেবারেই অনুচিত।
Watch the video
কিডনিতে পাথর: কারণ ও চিকিৎসা | Kidney Stone – Why do kidney stones occur?
যাদের কিডনিতে একবার পাথর ধরা পড়েছে, তাদের ভিটামিন ডি-জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। মাংস, মাছ ও পোলট্রি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবে না। যাদের হাইপারপ্যারাথাইরয়েড রোগ রয়েছে, তাদের অতি শিগগির তা অস্ত্রোপচার করা উচিত। বংশে কিডনিতে পাথর রোগের ইতিহাস অথবা কারও একাধিক পাথর থাকলে তাদের আবার পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
যেসব খাবারে কিডনি ভাল থাকে
- প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস (২ লিটার) বিশুদ্ধ পানি পান করা। তবে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে অধিক পানি পান করা প্রয়োজন।
- প্রচুর দানা বা বীজ জাতীয় খাদ্য খান। ব্রেড, নুডুলস, বাদাম ইত্যাদি খেতে পারেন।
- সপ্তাহে অন্তত একটি কচি ডাবের পানি পান করুন।
- প্রতিদিন অন্তত চারটি থানকুটি পাতা খেতে হবে।
- গবেষণায় দেখা গেছে পাথরকুচি পাতার নির্যাস কিডনি পাথরী ধ্বংস করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- মূলা কিডনির স্বাস্থ্য উন্নয়নে সাহায্য করে। কারণ এটি মূত্রবর্ধক প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ। এছাড়া এটি রক্তে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
- শশা, তরমুজ, লাউ, বাঙ্গি, কমলালেবু, লেবু, মাল্টা, ডালিম, বীট, গাজর, আখের রস, বার্লি, পিঁয়াজ, সাজনা ইত্যাদি পরিমাণ মতো খেতে হবে।
- গোক্ষুর: গবেষণায় দেখা গেছে যাদের প্রসাবের পরিমাণ কমে যায় এবং হাত পায়ে পানি জমে তারা নিয়মিত গোক্ষুর চূর্ণ ৩ গ্রাম মাত্রায় সেবন মূত্রের পরিমাণ ঠিক হয়ে যাবে এবং শরীরে জমে থাকা পানি বা ইউরিক এসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
- রক্ত চন্দন কিডনি রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ। রক্ত চন্দন ডাই ডাইরুটিক হিসাবে কাজ করে। এছাড়া প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বন্ধ করে এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
- জুনিপার বেরি মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে, কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।