প্রশ্ন: রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার সাহাবী হযরত আমিরে মু’আবিয়াহ্ কি কাফের ছিলেন?

1
237
কোরআন-হাদীসের আলোকে শাফাআত
কোরআন-হাদীসের আলোকে শাফাআত
Advertisements
5/5 - (1 vote)

প্রশ্ন: রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার সাহাবী হযরত আমিরে মু’আবিয়াহ্ কি কাফের ছিলেন?

উত্তর:

প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার সাহাবী হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একজন জলীলুল কদর কাতেবে ওহী ও মুজতাহিদ সাহাবী ছিলেন । তিনি কাফের, ফাসিক ছিলেন ইত্যাদি বলা বা মনে করা হারাম, নিন্দনীয় ও গুনাহের কারণ এবং গুমরাহীর নামান্তর, কারণ, সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা শান- মান, সাধারণ মুসলমান ও ওলী আবদালের চেয়ে অনেক অনেক ঊর্ধ্বে এবং তাঁদের শান-মানে নিন্দা বা গালমন্দ করা থেকে অথবা কু-ধারণা হতে বিরত থাকার জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বারবার সতর্ক করেছেন এবং কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।

যেমন- সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে-

Advertisements

عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تسبوا اصحابي فلوان احدكم انفق مثل أحد ذهبا مابلغ من احدهم ولا نصيفه

অর্থাৎ ,প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালমন্দ করো না । তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর তবে তাঁদের এক মুদ বা অর্ধমুদ এর সম-পরিমাণ সাওয়ারও হবে না ।
[সহীহ বুখারী শরীফ, পারা-১৪]

অপর হাদিসে উল্লেখ রয়েছে- প্রিয়নবী রাউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رايتم الذين يسبون اصحابي فقولوا لعنة الله على شركم [رواه الترمذي، مشكواة شریف 554 ]

অর্থাৎ বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা যখন ঔ সমস্ত লোকদেরকে দেখবে, যারা আমার সাহাবীদেরকে গালি দেয়, তখন বলবে তোমাদের এ ঘৃণ্য কাজের উপর আল্লাহর অভিশাপ । [তিরমিযী ও মিশকাত শরীফ, পৃ. ৫৫৪]
সাহাবীদের মন্দ বলা ও গালি দেয়ার পরিমাণ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

فمن سبهم فعليه لعنة الله والملائكة
والناس اجمعين

অর্থাৎ যারা আমার সাহাবায়ে কেরামকে গালি দেয় তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেস্তাগণের এবং সমস্ত মানুষের অভিশাপ ।
[নুযহাতুল মাজালিস, কৃত, ইমাম আব্দুর রহমান সৱী (রহ.), ২য় খন্ড, ৫২০ পৃ. ]

সাহাবীদের সম্মান করা প্রসঙ্গে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

اكرموا اصحابي فانهم خياركم

অর্থাৎ তোমরা আমার সাহাবায়ে কেরামকে সম্মান করো, কেননা তাঁরা তোমাদের চেয়ে অনেক উত্তম ।
[মেশকাত শরীফ, পৃ. ৫৫৪ ]

হযরত আমিরে মু’আবিয়াহ্  রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু

আর আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু একজন প্রখ্যাত সাহাবী ছিলেন। তাঁর ফজীলত বা মর্যাদা প্রসঙ্গে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। স্বয়ং হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য দোয়াও করেছেন। হাফেজুল হাদিস হারেস ইবনে ওসামা একটি বড় হাদীস শরীফ রেওয়ায়ত করেছেন। যার মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদীন ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের ফজীলতসমূহ বর্ণিত রয়েছে।

উক্ত হাদীসে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া সম্পর্কে বর্ণিত আছে- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

ومعاوية ابن ابي سفيان اعلم امتی واجودها

অর্থাৎ হযরত আমিরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আমার উম্মতের বড় জ্ঞানী, ও বড় দানবীর ।

[তাতহীরুল জিন্নাহ্ ও হযরত আমীরে মুয়াভিয়া পর এক নজর কৃত, হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহ. ]

উল্লেখ্য যে, সমস্ত ওলামা-মাশায়েখ মুহাদ্দেসীন ও সাহাবায়ে কেরাম হযরত আমীরে মুয়াবিয়ার প্রশংসা করেছেন। যেমন ইমাম কস্তালানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর শরহে সহীহ বোখারীতে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত আমির মুয়াবিয়া একান্ত প্রশংসার পাত্র ও অনেক মহৎ গুণাবলীর অধিকারী। তিনি ন্যায়পরায়ণ, জ্ঞানী, ভদ্র, দয়ালু, বুদ্ধিমান, ওহী লেখক সাহাবী ছিলেন । শুধু তাই নয়, হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হতে ১৬৩টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী শরীফে ৪টি, সহীহ মুসলিম শরীফে ৫টি হাদীস এককভাবে স্থান পেয়েছে। তাছাড়া বাকী হাদিস শরীফসমূহ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।

আর সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা বা দৃঢ় বিশ্বাস হলো-

جماعة الصحابة رضى الله عنهم كلهم عدول و هم قدوة اولى لهذه الامة المسلمة الى يوم القيامة

অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামের সকলেই ন্যায়পরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য। কিয়ামত পর্যন্ত এ উম্মতে মুসলিমার জন্য তারাই প্রথম আদর্শ ।
[শরহে আকায়েদে নাসাফী, কৃত আল্লামা ইমাম সাদ উদ্দীন তাফতায়ানী (রহ. ]
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে, সাহাবায়ে কেরামের একজনকে বেশি মুহাব্বত করে অন্যজনের সাথে শত্রুতা পোষণ করার কোন সুযোগ নেই ।

হযরত আমিরে মু’আবিয়াহ্  রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু

এ কারণে সাহাবায়ে কেরামের ভালো দিকগুলো আলোচনার কেবল বৈধতা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে শরহে আকায়েদে নাসাফীতে উল্লেখ রয়েছে-

لا يجوز ذكر هم الا بالخير حبهم من علامات الايمان من ابغضهم فقد كفر ونافق وطغى

অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তাদেরকে ভালো দিক নিয়েই আলোচনা বৈধতা আছে । তাদেরকে ভালোবাসা ঈমানের আলামত। যারা তাদের সাথে শত্রুতা করে তারা নাফরমানী, মুনাফেকী এবং সীমালঙ্ঘন করে।

উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবায়ে কেরামের প্রতি ভালবাসা পোষণ করা, সম্মান করা, শ্রদ্ধা করা ওয়াজিব এবং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সম্মান করার নামান্তর। তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে ভাল ধারনা পোষণ করাও মুসলমানের ঈমানের পরিচয় বহন করে এবং তাদের ব্যাপারে মন্দ, খারাপ ও ধারনা করা মুনাফেকির আলামত। যেকোন সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে কু-ধারণা হতে বেঁচে থাকা অপরিহার্য ।

স্বয়ং হযরত ছিদ্দিকে আকবর, হযরত ওমর ফারূকে আযম, ও হযরত ওসমান গণি, হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমসহ কোন সাহাবী, সম্মানিত তাবেঈন, তবে তাবেঈন, মাযহাবের ইমামগণ এবং তরিকতের শাইখগণ সকলেই হযরত আমির মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে নেহায়ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন। তাঁর শানে কাফির, মুনাফিক ও ফাসিক এ জাতীয় শব্দ প্রয়োগ করা ভন্ড, মুনাফিকের চরিত্র, কোন প্রকৃত ঈমানদারের চরিত্র হতে পারে না।

উত্তর দিয়েছেনঃ

অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ অছিয়র রহমান।

তথ্য সংগ্রহঃ মাসিক তরজুমানে আহলে সুন্নত

নিয়মিত তরজুমান -এ- আহলে সুন্নত পড়ুন।

07. Rajab

আরও পড়ুন………

Advertisements

Leave a Reply