Table of Contents
শব্দের শ্রেণিবিভাগ (বাংলা ২য় পত্র)
বাংলা শব্দভান্ডারকে বিভিন্ন বিবেচনায় ভাগ করা যায়:
ক. উৎস বিবেচনা,
খ. গঠন বিবেচনা,
গ. পদ বিবেচনা।
ক. উৎস বিবেচনায় শব্দের শ্রেণিবিভাগ
উৎস বিবেচনায় বাংলা শব্দভান্ডারকে চার শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়: তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি। এর মধ্যে তৎসম ও তদ্ভব শ্রেণিকে নিজস্ব উৎসের এবং দেশি ও বিদেশি শ্রেণিকে আগন্তুক উৎসের শব্দ হিসেবে গণ্য করা হয়।
১. তৎসম শব্দ:
প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা থেকে বিবর্তিত যেসব বাংলা শব্দের লিখিত চেহারা সংস্কৃত ভাষার শব্দের অনুরূপ সেগুলোকে তৎসম শব্দ বলে। যথা: পৃথিবী, আকাশ, গ্রহ, বৃক্ষ। সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণ করে গঠিত পারিভাষিক শব্দকেও তৎসম শব্দ বলা হয়। যথা: অধ্যাদেশ, গণপ্রজাতন্ত্রী, মহাপরিচালক, সচিবালয় ইত্যাদি।
২. তদ্ভব শব্দ:
প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা থেকে বিবর্তিত যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় একেবারেই স্বতন্ত্র, সেগুলোকে তদ্ভব শব্দ বলা হয়। উদাহরণ: হাত, পা, কান, নাক, জিভ, দাঁত; হাতি, ঘোড়া, সাপ, পাখি, কুমির ইত্যাদি।
৩. দেশি শব্দ:
বাংলা অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা থেকে কিছু শব্দ বাংলা ভাষায় স্থান পেয়েছে, এগুলোকে দেশি শব্দ বলা হয়। উদাহরণ: কুড়ি, পেট, চুলা, কুলা, ডাব, টোপর, ঢেঁকি ইত্যাদি।
৪. বিদেশি শব্দঃ
ঐতিহাসিক কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের আন্তঃসম্পর্ক তৈরি হওয়ায় সেসব দেশের বহু শব্দ বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, এই শব্দগুলোকে বিদেশি শব্দ বলে। এসব বিদেশি শব্দের মধ্যে রয়েছে আরবি, ফারসি, ইংরেজি, পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, তুর্কি, হিন্দি ইত্যাদি।
উদাহরণ –
আরবি: আল্লাহ, হারাম, হালাল, হজ, জাকাত, ঈদ, উকিল, কলম, নগদ, বাকি, আদালত, তারিখ, হালুয়া ইত্যাদি।
ফারসি: খোদা, দোজখ, নামাজ, রোজা, চশমা, তোশক, দোকান, কারখানা, আমদানি, জানোয়ার ইত্যাদি।
ইংরেজি: চেয়ার, টেবিল, কলেজ, স্কুল, পেনসিল, ব্যাগ, ফুটবল, ক্রিকেট, হাসপাতাল, বাক্স, বোতল ইত্যাদি।
পর্তুগিজ: আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদরি, বালতি ইত্যাদি।
ফরাসি: কুপন, ডিপো, রেস্তোরাঁ, আঁতেল, কার্তুজ ইত্যাদি।
ওলন্দাজ: হরতন, ইস্কাপন, রুইতন, টেক্কা, তুরুপ ইত্যাদি।
তুর্কি: চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা ইত্যাদি।
হিন্দি: পানি, ধোলাই, লাগাতার, সমঝোতা।
খ. গঠন বিবেচনায় শব্দের শ্রেণিবিভাগ
গঠন বিবেচনায় বাংলা শব্দকে মৌলিক এবং সাধিত এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. মৌলিক শব্দ:
যেসব শব্দ বিশ্লেষণ করলে অর্থপূর্ণ কোনো অংশ থাকে না, সেগুলোকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন- গাছ, পাখি, ফুল, হাত, গোলাপ ইত্যাদি।
২. সাধিত শব্দ:
যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে তার মধ্যে এক বা একাধিক অর্থপূর্ণ অংশ থাকে, সেগুলোকে সাধিত শব্দ বলে। উপসর্গ বা প্রত্যয় যোগ করে অথবা সমাস প্রক্রিয়ায় সাধিত শব্দ তৈরি হয়।
যেমন- পরিচালক, গরমিল, সম্পাদকীয়, সংসদ সদস্য, নীলাকাশ ইত্যাদি। শব্দের দ্বিত্ব করেও সাধিত শব্দ হয়ে থাকে। যেমন- ফিসফিস, ধুমাধুম ইত্যাদি।
গ. পদ বিবেচনায় শব্দের শ্রেণিবিভাগ
শব্দ যখন বাক্যে ব্যবহৃত হয়, তখন তার নাম হয় পদ। বাক্যের অন্তর্গত এসব শব্দ বা পদকে মোট আটটি শ্রেণিতে ভাগ করে বর্ণনা করা যায়:
১. বিশেষ্য,
২. সর্বনাম,
৩. বিশেষণ,
৪. ক্রিয়া,
৫. ক্রিয়াবিশেষণ,
৬. অনুসর্গ,
৭. যোজক ও
৮. আবেগ।
বাক্যে প্রয়োগের উপরে শব্দশ্রেণির এই আট রকম বিভাজন চূড়ান্ত হয়ে থাকে। যেমন, যখন বলা হয়: ‘লাল থেকে নীল ভালো, তখন ‘লাল’ এটি বিশেষ্য পদ।
কিন্তু যখন বলা হয়: আমি একটি লাল ফুল তুলেছি – তখন ‘লাল’ বিশেষণ পদ।
আরও পড়ুন……
- সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করুন। উদাহরণ যোগে বৈশিষ্ট্যগুলোর ব্যাখ্যা।
- উপসর্গ কাকে বলে ? উপসর্গের চারটি প্রয়োজনীয়তা।
- অর্থানুসারে শব্দ কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা।
- প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ
- ১০০ টি গুরুত্বপূর্ণ সমার্থক শব্দ SSC, HSC ও চাকরির পরীক্ষার্থীদের জন্য
- ১৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ বাগধারা SSC, HSC ও চাকরির পরীক্ষার্থীদের জন্য
- রচনা
- ভাবসম্প্রসারণ
- অনুচ্ছেদ