অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা যাবে কি?

0
134
অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা যাবে কি
অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা যাবে কি
Advertisements
5/5 - (1 vote)

Table of Contents

অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা যাবে কি?

পবিত্র কোরআন সর্বশক্তিমান আল্লাহর বাণী, যা সবচেয়ে পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। তাই এই পবিত্রতা ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে কুরআন স্পর্শ ও তেলাওয়াতের জন্য শারীরিক পবিত্রতা আরোপ করা হয়েছে।

সকল যুগের সকল আলেম একমত যে পবিত্রতা অর্জন ছাড়া সরাসরি কুরআন স্পর্শ করা হারাম। ইমাম নবী ও ইবনে তাইমিয়া বলেন, হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহ তাআলা আনহু), সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহ তাআলা আনহু) এবং অন্যান্য সাহাবীগণ মত দিয়েছেন যে, পবিত্র না হলে কুরআন স্পর্শ করা হারাম। অন্যান্য সাহাবীদের কোন বিপরীত মত নেই। (শারহুল মুহাজ্জাব, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮০, মাজমাউল ফতোয়া খণ্ড ২১, পৃষ্ঠা ২৬৬)

আপনি যদি সূরা ওয়াকিয়ার ৭৭-৮০ আয়াতগুলি দেখেন তবে যে কেউ বুঝতে পারবেন এখানে আল্লাহ তায়ালা কী বোঝাতে চেয়েছেন।

Advertisements

সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই এটি সম্মানিত কোরআন, যা কিতাবে সংরক্ষিত আছে।” যারা পবিত্র তারা ছাড়া কেউ একে কেউ স্পর্শ করে না। এটা বিশ্বজগতের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।’

সুতরাং আমরা বুঝি যে, লাহে মাহফুজে সংরক্ষিত কোরআন দুনিয়াতে নাযিল হওয়ার পর অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা যাবে না। সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং আয়াতে ‘মুতাহ্হারুন’ শব্দটি পাক-পবিত্র ( ওযু বা গোসলের মাধ্যমে) অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।

পবিত্র কোরআনের আয়াতসহ তরজমা

৫৬:৭৭ اِنَّهٗ لَقُرۡاٰنٌ کَرِیۡمٌ ﴿ۙ۷۷﴾
নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন,
Indeed, it is a noble Qur’an Sahih International

৫৬:৭৮ فِیۡ کِتٰبٍ مَّکۡنُوۡنٍ ﴿ۙ۷۸﴾
যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে
In a Register well-protected; Sahih International

৫৬:৭৯ لَّا یَمَسُّهٗۤ اِلَّا الۡمُطَهَّرُوۡنَ ﴿ؕ۷۹﴾
যারা পুতঃ পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেহ তা স্পর্শ করেনা।

None touch it except the purified. Sahih International

৫৬:৮০ تَنۡزِیۡلٌ مِّنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۸۰﴾

ইহা জগতসমূহের রবের নিকট হতে অবতীর্ণ।

[It is] a revelation from the Lord of the worlds. Sahih International

সূরা ওয়াকিয়ার ৭৭-৮০

হায়েযাবস্থায় কুরআন শরীফ স্পর্শ করা – অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা যাবে কি? | মাসআলা-মাসায়েল

মাসআলা: হায়েযাবস্থায় কুরআন শরীফ স্পর্শ করা যেমন জায়েয নয়। অনুরূপভাবে কোথাও কুরআনের আয়াত লিখা থাকলে তাও স্পর্শ করা জায়েয নয়। তবে যদি এমন কোনো কিতাব হয়, যার মধ্যে কুরআনের আয়াত অপেক্ষা অন্য লিখা বেশি থাকে, তাতে হাত লাগানো যাবে। তবে আয়াতের উপর হাত লাগানো যাবে না।
-(বাহরুর রায়েক: ১ম খণ্ড ২০১ পৃষ্ঠা, তুহফায়ে খাওয়াতিন: ৭১৫ পৃষ্ঠা, শামী: ১ম খণ্ড ১৭৩ পৃষ্ঠা)

মাসআলা: বর্তন-পিরিচ অথবা কাগজের উপর যদি শুধুমাত্র কুরআনের আয়াত লিখা থাকে, তাতে হাত লাগানো যাবে না। তবে পৃথক কোনো কাপড় দিয়ে তা ধরা যাবে। মহিলাদের একান্ত গোপনীয় মাসায়েল ৩০-(হিন্দিয়া ১/৩৯, শামী ১/২১৪, আলজাওহিরাতুন নায়্যিরাহ: ১/৩০, বাহরুর রায়েক: ১/২০১)

মাসআলা: কুরআন শরীফের গেলাপ (জুঝদান) যদি কুরআন শরীফ থেকে আলাদা হয়, তবে তা দ্বারা কুরআন শরীফ ধরা জায়েয আছে। অনুরূপভাবে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন কাপড় দ্বারাও কুরআন শরীফ ধরা জায়েয আছে।
-(শামী: ১ম খণ্ড ২১৩ পৃষ্ঠা, আল জাওহিরাতুন নায়ি‍্যরাহ: ১ম খণ্ড ৩০ পৃষ্ঠা)

হায়েযাবস্থায় কুরআন শরীফ স্পর্শ করা – অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা যাবে কি? | মাসআলা-মাসায়েল

মাসআলা: কুরআন শরীফের সাথে সংযুক্ত জুঝদান এবং যে কাপড় শরীরের সঙ্গে যুক্ত আছে যেমন মেয়েদের দোপাট্টা, উড়না বা কুর্তার আস্তিন ইত্যাদি দ্বারা কুরআন শরীফ স্পর্শ বা ধরা জায়েয নয়।
-(শামী: ১ম খণ্ড ২১৫ পৃষ্ঠা, হিন্দিয়া: ১ম খণ্ড ৩৯ পৃষ্ঠা, )

হায়েযাবস্থায় ধর্মীয় কিতাব স্পর্শ করা ও পড়া

মাসআলা: হায়েযাবস্থায় ধর্মীয় কিতাব পাঠ করা এবং সেগুলোকে স্পর্শ করা (তাফসীর, হাদীস, ফেকাহের কিতাব ছাড়া) জায়েয আছে। তবে যেসব স্থানে কুরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ আছে, তা পাঠ করা যাবে না এবং সেখানে যেন হাতের স্পর্শ না লাগে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। -(আলমগিরি: ১ম খণ্ড ৩৯ পৃষ্ঠা, বিষয় ভিত্তিক মাসআলা: ১০৮ পৃষ্ঠা)

মাসআলা: যে কাগজের উপর দু’আর আয়াত লেখা থাকে, তাতে হাত লাগানো যাবে, তবে দু’আর আয়াত বা শব্দগুলোর উপর হাত রাখবে না। -(আহসানুল ফাতাওয়া: ২য় খণ্ড ৭১ পৃষ্ঠা)

হায়েযাবস্থায় যিকির আযকার তাসবীহ ও দু’আ-দুরূদ পড়া

মাসআলা: হাযেয় বা ঋতুস্রাবকালীন সময়ে কুরআন তেলাওয়াত ছাড়া যাবতীয় যিকির-আযকার, দু’আ-দুরূদ ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা জায়েয আছে। এমনকি দু’আর নিয়তে কুরআনের আয়াত পাঠ করাও জায়েয আছে। উলুম: ১ম খণ্ড ২১৭ পৃষ্ঠা, আহসানুল ফাতাওয়া: ২য় খণ্ড ৬৭ পৃষ্ঠা)-(শামী: ১ম খণ্ড ২১৫ পৃষ্ঠা, বাহরুর রায়েক: ১ম খণ্ড ২০০ পৃষ্ঠা)

মাসআলা: পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম এবং খানার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলতে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, এতে কুরআন তেলাওয়াত উদ্দেশ্য নয় বরং দু’আ উদ্দেশ্য।

Advertisements

Leave a Reply