প্রিয়নবীর ﷺ নাম শুনে চুম্বন করার বিধান
প্রশ্ন: অনলাইলেন একজন আলেম নামধারী হুজুর (সম্প্রতি) আমাদের প্রিয়নবীর নাম শুনে চুম্বন খাওয়াকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছে এ কাজটা না কি ভেজাল্ল্যা ও ভুল আমল। আসলে সত্যটা কি? এটার পক্ষে প্রমাণসহ উত্তর দিয়ে সরলমনা মুসলমানদের আকিদা-আমল রক্ষা করার নিবেদন রইল।
(প্রশ্ন করেছেন গাজী মুহাম্মদ আলী নেওয়াজ কাটিরহাট, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম)
উত্তর: প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে পরিপূর্ণ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও মুহাব্বত সহকারে উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়-এর নখে চুম্বন খাওয়া বা চুম্বন করে চোখে লাগানো বরকতময় ও মুস্তাহাব। এ বরকতময় কাজকে অস্বাস্থ্যকর, ভেজাল্ল্যা ইসলাম এবং ভুল কাজ ইত্যাদি বলা মুর্খতা, গোঁড়ামী এবং নবী বিদ্বেষীর নামান্তর। কেননা, আযান, ইকামত এবং ধর্মীয় ওয়াজ নসিহত, বয়ান ইত্যাদিতে প্রিয়নবীর নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুম্বন করে আদব ও ভক্তি সহকারে চোখে লাগানো জায়েজ, পূণ্যময় আমল এবং মুস্তাহাব।
প্রিয়নবীর ﷺ নাম শুনে চুম্বন করার বিধান
এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকিহ্ আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর বিখ্যাত রদ্দুল মোহতার তথা ফতোয়া-ই শামীতে উল্লেখ করেছেন-
يستحب ان يقال عند سماع الأولى من الشهادة صلى الله عليك يارسول الله وعند الثانية منها قرة عيني بك يارسول الله ثم يقول اللهم متعنى بالسمع والبصر بعد وضع ظفرى الابهامين على العينين فانه عليه السلام يكون قائدا له الى الجنة [رد المحتار كتاب
الصلوة – باب الاذان – ج – ا- صفحه -[ 293
অর্থাৎ, আযানের প্রথম শাহাদাত তথা আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ শুনার সময় সাল্লাল্লাহু আলায়কা ইয়া রাসূলাল্লাহ্’ আর দ্বিতীয় শাহাদাত শুনার সময় কুররাতু আইনী বিকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্’ এবং তারপর আল্লাহুম্মা মাত্তিনী বিসসামঈ ওয়াল বাসারি’ বলবে এবং নিজের দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ চুম্বন করে দু’চোখের উপর লাগাবে। এটা করা মুস্তাহাব। যে ব্যক্তি এ আমল করবে হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।
[রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ২৯৩ পৃ. সালাত অধ্যায়]
প্রিয়নবীর ﷺ নাম শুনে চুম্বন করার বিধান
হযরত সৈয়দ আহমদ তাহতাভী হানাফী হানাফী মাযহাবের অন্যতম হাদিস ও ফিক্বহ বিশারদ
‘তাহতাভী আলা মারাক্বীয়ল ফালাহ্’ কিতাবে ইমাম ইবনে আবেদীন শামী হানাফীর উপরোক্ত অভিমত উল্লেখ করত: আরো লিখেছেন-
ذكَرَهُ الدَّيْلِمِيُّ فِي الْفِرْدُوسِ مِنْ حَدِيْثِ أَبِي بَكَر الصديق رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قَوْلَ الْمُؤَدِّنِ اشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ قَالَ هَذَا وَقَبَّلَ بِبَاطِن الْمَلتَى السَّبَابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَهُ فَقَالَ مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيْلِي فَقَدْ حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي –
অর্থাৎ ইমাম দায়লামী তাঁর মুসনাদে ‘ফেরদাউস’ হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাদিস বর্ণনা করেন, নিশ্চয় তিনি যখন মুয়াজ্জিনের أَشْهَدُ أَنَّ ى مُحَمَّدًا رَسُوْلَ اللَّهِ নলেন তিনিও অনুরূপ বললেন, শাহাদত আঙ্গুলিদ্বয়ের মাথায় চুমা দিলেন এবং নয়নযুগল মসেহ করলেন।
এটা দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার বন্ধু যেরূপ করেছে সে রূপ যদি কেউ করে, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হবে। সুতরাং বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ অথবা শাহাদত আঙ্গুলির নখ বা মাথায় চুমা দিয়ে উক্ত আমল করা মঙ্গলময় ও উত্তম।
অপর বর্ণনায় আছে-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ الْمَسْجِدَ في عشر المُحَرَّمِ عِنْدَ الاسْطُوَانَةِ حِذَاءَ أَبِي بَكْرٍ فَقَامَ بلال فَأَذَنَ فَلَمَّا بَلَغَ اشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فَقَبَّلَ أَبُو بَكْرٍ ظُفَرَ إِبْهَامَيْهِ وَوَضَعَهُمَا عَلَى عَيْنَيْهِ وَقَالَ قُرَّةٌ عَيْنِي بِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلَمَّا فَرَعَ بِلالُ مِنَ الاذان تَوَجَّهَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ فَقَالَ مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلْتَ يَا آبَابَكَر غَفَرَ اللَّهُ ذُنُوبَهُ
অর্থাৎ, আল্লাহর রাসূল মুহররমের দশ তারিখ মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন। মসজিদের স্তম্ভের পাশে হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পাশে বসলেন। অতঃপর হযরত বেলাল দাড়িয়ে আজান اشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ পৌঁছেন তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার বৃদ্ধাঙ্গুলদ্বয়ের নখে চুমা দেন এবং উভয়টি তার নয়নযুগলে রাখেন এবং বললেন,
قُرَّةُ عَیْنِىْ بِكَ یَا رَسُوْلَ االلهِ
অর্থাৎ, হে আল্লাহর রসূল! আপনার বরকতে আমার চোখ শীতল হোক।
হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন আযান শেষ করলেন হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বরকতে আমার চোখ শীতল হোক। হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন আযান শেষ করলেন হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকরের দিকে মনোযোগী হন এবং বলেন, হে আবু বকর! তুমি যেরূপ করেছ সেরূপ যদি কেউ করে আল্লাহ্ তার গুনাহ্ ক্ষমা করবেন।’
মুসনাদে ফেরদাউসে আরো আছে-
اَنَّ رَسُوْلَ االلهِ صَلَّى االلهُ عَلَیْھِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ قَبَّلَ ظُفْرِىْ
اِبْھَامَیْھِ عِنْدَ سِمَاعِ اَشْھَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ االلهِ فِى
الْاَذَانَ اَكُوْنُ اَنَا قَائِدَهُ وَمُدْخِلُھُ فِى الْجَنَّةِ
অর্থাৎ ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আযানের মধ্যে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্ শুনার সময় যে তার উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ চুম্বন করে আমি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাব।’
কেউ কেউ বলেছেন-
اِنَّ ھَذَا الْفِعْلَ مِنَ السُّنَّةِ الْخُلَفَاءِ وَاَنْ یَقُوْلُ
عِنْدَ التَّقْبِیْلِ اَللھُمَّ احْفِظْ عَیْنِىْ وَنَوِّرْھُمَا
অর্থাৎ, এ কাজটি সুন্নাত ও খোলাফায়ে রাশেদীনের রীতিনীতি। আঙ্গুল চুম্বনের সময় বলবে, হে আল্লাহ্ আপনি আমার চোখ হেফাজত করুন এবং উভয়টিকে আলোকিত করুন।’
প্রিয়নবীর ﷺ নাম শুনে চুম্বন করার বিধান
এ বর্ণনাসমূহকে সনদ ও বর্ণনাকারীদের বিষয়ে জঈফ বলা হলেও তা আমলের ক্ষেত্রে কবুল ও গ্রহণযোগ্য। যেহেতু জঈফ বর্ণনা দ্বারা মুস্তাহাব হিসেবে আমল করতে কোন অসুবিধা নেই। প্রখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনে সিরীন বলেন-
وَھُوَ مُجَرَّبٌ كُنْتُ اَمُرُبِھ مَنْ كَانَ بِعَیْنِھِ نُوْعٌ غِشَاوَةٍ
অর্থাৎ, এটা পরীক্ষিত কাজ, কারো চোখে অসুখ হলে আমি তাকে এ কাজটি করার পরামর্শ দিতাম।’
ইবনে খলকান বলেন-
مَنْ فَعَلَ ذَالِكَ وَدَاوَمَ عَلَیْھِ مِنَ الضُّرِّ
حفظَ مِنْ عَیْنِھِ مَا دَامَ حَیًا
অর্থাৎ, যে ওই কাজটি সর্বদা করবে সে চোখের রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে আজীবন।
মোট কথা আযানে উক্ত শাহাদাতের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলী চুমা দিয়ে ভক্তি ও আদবসহকারে চোখে লাগানো জায়েয, পূণ্যময় এবং প্রমাণিত সত্য।
এ বিষয়ে তরজুমান প্রশ্নোত্তর বিভাগের পূর্বে বিস্তারিত ও প্রামাণ্য আলোচনা করা হয়েছে।
(উত্তর দিয়েছেন অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান,
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা)
নিয়মিত তরজুমানে আহলে সুন্নত পড়ুন।
- শাওয়াল মাসের ০৬ রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব
- প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ণ দোয়া সমূহ | লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পাঠের সওয়াব
- প্রত্যেক রোগেরই প্রতিষেধক রয়েছে – আল হাদীস – রুকইয়াহ কি ?
- ইসলামিক প্রশ্ন ও উত্তর – নামাযের প্রথম বৈঠকে ভুলে দরূদ পড়লে কি হয় ?
- জানাজা নামাজের নিয়মাবলী | জানাযার নামাযের পদ্ধতি (হানাফী)
- ছেলে সন্তান মায়ের বুকের দুধ কতদিন পান করতে পারবেন ?
- প্রিয়নবীর ﷺ নাম শুনে চুম্বন করার বিধান
[…] […]