হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব ০২

3
260
ইসলামের বাস্তব কাহিনী | ইসলামিক বাস্তব গল্প | Islamic real story
ইসলামের বাস্তব কাহিনী | ইসলামিক বাস্তব গল্প | Islamic real story
Advertisements
5/5 - (1 vote)

হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু | ইসলামিক বাস্তব গল্প

হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু | ইসলামিক বাস্তব গল্প
হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু | ইসলামিক বাস্তব গল্প

হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা আসমানের তারা

একবার এমন এক রাত্রে, যখন আকাশ পরিস্কার ছিল এবং অগণিত তারকারাজি ঝলমল করছিল, হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত উম্মল মুমেনীন আয়েশা ছিদ্দিকা (রাদি আল্লাহু আনহা) এর পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। হযরত আয়েশা আসমানের দিকে তাকিয়ে হুযূরকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আসমানে যতগুলো তারা আছে এতগুলো কি কারো নেকী আছে? হুযূর ফরমালেন, হ্যাঁ । হযরত ছিদ্দিকা আরয করলেন, হুযূর! সেটা কার? হুযূর ফরমালেন, ওমরের ।

ইসলামের বাস্তব কাহিনী | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব ০১ | The incident of Hazrat Abu Bakr

উম্মুল মুমেনীন হযরত ছিদ্দিকার দৃঢ় ধারণা ছিল যে, হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিদ্দিকে আকবরের নাম বলবেন কিন্তু হযরত ওমরের নাম শুনে আয়শা ছিদ্দিকা আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার আব্বাজানের নেকী গুলো কোথায় গেল? হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমালেন, আয়েশা, ওমরের মস্ত নেকীগুলো আবু বকরের নেকীগুলোর একটি নেকীর বরাবর মাত্র । (মিশকাত রীফ ৫৫২ পৃঃ)

Advertisements

সবকঃ ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) এর শান অনেক উর্ধে। বীগনের পর সবচে উচ্চ মার্যাদা হচ্ছে হযরত আবু বকরের। হিজরতের সময় যে রাত তিনি হুযূরের সাথে কাটিয়ে ছিলেন, সেই একটি নেকীর এত বড় মর্যাদা যে, উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহুর) তারকারাজির বরাবর নেকীগুলোও সেই একটি নেকীর বরাবর হতে পারবে না ৷

আমাদের হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে উম্মতের নেক ও বাদে আমল কোনটা অদৃশ্য নয় বরং হুযূর সবের আমলসমূহ সম্পর্কে জ্ঞাত । কতেক নেকী প্রকাশ্যে আবার কতেক নেকী গোপনেও হয়ে থাকে। হযরত ওমরের নেকীগুলোর মধ্যে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য উভয় ধরণের ছিল। কিন্তু এসব নেকীগুলোর জ্ঞান হুযূরের ছিল। তাই তিনি ফরমালেন যে, ওমরের নেকীগুলো আসমানের চারকারাজির বরাবর ।

পাঁচটি বিষয় যা জানা আবশ্যক

একদিন হযরত মওলা আলী (রাদি আল্লাহু আনহু) হযরত ছিদ্দিকে আকবর রাদি আল্লাহু আনহু) কে জিজ্ঞেস করলেন, জনাব! আপনি কোন্ বিষয়গুলোর দ্বারা এত উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে গেছেন?
হযরত ছিদ্দিকে আকবর ফরমালেন, পাঁচটি বিষয়ের দ্বারাঃ

একঃ আমি দু’ধরণের লোক দেখতে পাই। এক ধরণের লোকেরা দুনিয়া তালাশে ব্যস্ত এবং অন্য ধরণের লোকেরা পরকালের জন্য সচেষ্ট। আমি কিন্তু নওলাকে পাবার জন্য চেষ্টা করছি।

ইসলামের বাস্তব কাহিনী | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব ০১ | The incident of Hazrat Abu Bakr

দুইঃ আমি যখন থেকে ইসলাম ধর্মের ছায়াতলে এসেছি, এর পর থেকে কখনো পেট ভরে দুনিয়ার খাদ্য গ্রহণ করিনি। কেননা সত্য জ্ঞানের স্বাদ আমাকে দুনিয়াবী খাবার থেকে উদাসীন করে দিয়েছে।

তিনঃ যখন থেকে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি, এর পর থেকে কখনো পরিতৃপ্তি হয়ে পানি পান করিনি। কেননা খোদা প্রেমের পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত হয়েছি।
চারঃ যখনই আমি এক সাথে দুনিয়াবী ও আখেরাতের কাজের সন্মুখীন হয়েছি, তখন আমি আখেরাতের কাজকে অগ্রাধিকার দিয়েছি এবং দুনিয়াবী কাজের কোন তোয়াক্কা না করে পরকালের কাজকে গ্রহণ করেছি।
পাঁচঃ আমি হুযূর সায়্যৈদুল আম্বিয়া (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সংশ্রবে ছিলাম এবং হুযূরের সাথে আমার এ সংশ্রব খুবই ভাল ছিল। (নজহাতুল মাজালিস, ৩০৪ পৃঃ ২হিঃ)

সবকঃ হযরত ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) উম্মতের মধ্যে মওলার সবচে বড় সন্ধানী ও পূর্ণ নৈকট্য লাভকারী, সাত্যের প্রেমিক, পরহিজগার এবং হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন ।

আরো পড়ুন:

হযরত হামযা এবং হযরত ওমর (রা) এর ইসলাম গ্রহন

১৫০ টি সেরা ইসলামিক উক্তি বা ইসলামী বানী [Top 150 Islamic Quotes in Bangla]

ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নামের তালিকা অর্থসহ – List of Islamic Names for Girls with “M”

প্রশ্নঃ মহিলাদের বোরকার ধরণ কী রূপ হওয়া ইসলামে নির্দেশ আছে জানতে চাই?

হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব ০২

পুলসেরাতের জিম্মাদারী

একদিন ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) হযরত মওলা আলী (রাদি আল্লাহু আনহু)কে দেখে মুচকি হাসলেন । মওলা আলী ছিদ্দিকে আকবরকে জিজ্ঞেস করলেন, জনাব, আমাকে দেখে হাসলেন কেন? ছিদ্দিকে আকবর বললেন, হে আলী, তোমাকে অভিনন্দন, আমাকে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমায়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত হযরত আলী কাউকে পুলসেরাত অতিক্রম করার অনুমতি দেবেনা, ততক্ষণ কেউ পুলসেরাত অতিক্রম করতে পারবে না ।

এটা শুনে হযরত আলীও হাসলেন এবং বললেন, হে খালিফাতুল মুসলেমীন! আপনাকেও ধন্যবাদ, আমাকে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমায়েছেন, হে আলী তুমি ঐ ব্যক্তিকে কক্ষনো পুলসেরাত অতিক্রম করার অনুমতি দিও না, যে ব্যক্তির মনে আবু বকরের প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে বরং ঐ ব্যক্তিকে অনুমতি দিও, যে আবু বকরকে ভালবাসে ।(নজহাতুল মাজালিস ৩০৬ পৃঃ ২ হিঃ)

সবকঃ হযরত আলী (রাদি আল্লাহু আনহু) এর প্রতি মহব্বত এবং তাঁর গোলামীর দ্বারা ফায়দা তখনই হতে পারে, যখন অন্তরে ছিদ্দিকে আকবরের মহব্বতও থাকে । অন্যথায় আলীর প্রতি নাম সর্বস্ব মহব্বত কোন কাজে আসবেনা।

হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব ০২
হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব ০২

আংটির নক্সা

একবার হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) এর হাতে তাঁর আংটি মুবারক দিয়ে ফরমালেন, এটার উপর لا اله الا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) লেখায়ে নিয়ে এসো। ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) সেটা নিয়ে গিয়ে সেটার উপর لا اله الا الله محمد رسول الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ) লেখায়ে নিয়ে আসলেন । যখন আংটি হুযূরের খেদমতে পেশ করলেন, তখন ওটার উপর লিখা ছিল لا اله الا الله محمد رسول الله এবং এর সাথে ছিদ্দিকে আকবরের নামও।

হুযূর জিজ্ঞেস করলেন, আবু বকর! আমি তো শুধু লা ইলাহা ইল্লাহা! লিখতে বলেছিলাম। কিন্তু তুমিতো আমার নাম এবং তোমার নামও লেখায়ে নিয়ে এসেছ। ছিদ্দিকে আকবর আরয করলেন, হুযূর, আল্লাহর নামের সাথে আপনার নাম না থাকাটা আমার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না। তাই আপনার নামটা আমি নিজে লেখায়েছি কিন্তু আমার নাম! এটাতো আমি কক্ষনো লেখাইনি ৷

ইত্যবসরে জিব্রাঈল আমীন উপস্থিত হলেন এবং আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলা বলেন, “ছিদ্দিকে আকবর আপনার নামকে আমার নাম থেকে আলাদা করতে রাজি হয়নি। আমিও ছিদ্দিকে আকবরের নামকে আপনার নাম থেকে আলাদা করতে রাজি হইনি । ছিদ্দিকে আকবর আমার নামের সাথে আপনার নাম লেখায়েছেন । আমিও ছিদ্দিকে আকবরের নামকে আপনার নামের সাথে লিখে দিয়েছি” । (তফসীরে কবীর ৯১ পৃঃ- ১জিঃ)

সবকঃ ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খালেস সহচর ছিলেন এবং সব জায়গায় হুযূরের সাথে থাকতেন ৷ স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাঁর এ সহচায্যের প্রত্যয়নকারী ও সাক্ষী ।

হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু
আংটির নক্সা

হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব ০২

আল্লাহ তাআলার সত্যায়ন

হযরত ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) একদিন ইহুদীদের একটি মাদ্রাসায় তাশরীফ নিয়ে গেলেন। ঐদিন তথায় ফখাস নামে ইহুদীদের এক বড় আলেম এসেছিল এবং এ কারণে সেখানে অনেক ইহুদী সমবেত হয়েছিল। হযরত ছিদ্দিকে আকবর ওখানে গিয়ে ফাসকে বললেন, হে ফাস, আল্লাহকে ভয় কর, মুসলমান হয়ে যাও। খোদার কসম, মুহাম্মদ আল্লাহর সাত্যিকার রসূল, যিনি সত্যবাণী নিয়ে এসেছেন এবং তোমরা তাঁর প্রশংসা তৌরীত ও ইন্‌জীল কিতাবে পেয়েছ ।

অতএব তোমরা মুসলমান হয়ে যাও এবং সত্যিকার রসূলকে স্বীকার কর, নামায পড়, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহকে কর্জে হাসনা প্রদান কর, যাতে তোমরা বেহেশতে যেতে পার । ফাস বললো, হে আবু বকর! আমাদের খোদা কি আমাদের থেকে কর্জ চায়? আপনার কথা থেকে তো এটাই বুঝা যায় যে, আমরা ধনী এবং আল্লাহ ফকীর । এটা শুনে ছিদ্দিকে আকবরের রাগ আসলো এবং ফখাসের মুখে একটি থাপ্পর মেরে দিলেন এবং বললেন, খোদার কসম, তোমাদের সাথে আমাদের সন্ধি না থাকলে এক্ষনিই গরদান আলাদা করে ফেলতাম।

ফখাস থাপ্পর খেয়ে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গেল এবং ছিদ্দিকে আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো। হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিদ্দিকে আকবরকে জিজ্ঞেস করলে ছিদ্দিকে আকবর আরয করলেন, হুযূর! সে এ রকম বলেছিল. যে, আমরা ধনী এবং আল্লাহ ফকীর । এ কথায় আমার রাগ এসে যায়। ফাস সেটা অস্বীকার করলো এবং বললো যে, এ রকম কথা সে কখনো বলেনি। ঐ সময় ছিদ্দিকে আকবরের সমর্থনে আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন ।

لقَدْ سَمِعَ اللهُ قَوْلَ الَّذِيْنَ قَالُوا إِنَّ اللهَ فَقِيْرٌ وَنَحْنُ أَغْنِيَاء.
অর্থাৎ আল্লাহ ওসব লোকদের এ কথা বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তাআলা ফকীর এবং আমরা ধনী ।

আল্লাহ তাআলার এ সত্যায়ন ও সাক্ষ্যের দ্বারা ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) এর সত্যতা পরিস্কার হয়ে গেল।
(কুরআন করীম পারা ৪, রুকু ১০, রুহুল বয়ান, ৩৯৩ পৃঃ ১জিঃ)

সবকঃ ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) দ্বীনের ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর ছিলেন। তাঁর আন্তরিক জজ্‌বার এমন শান যে, আল্লাহ তাআলাও তাঁর আন্তরিক জবার প্রশংসা ও প্রত্যয়ন করেছেন। এর পরও যে ব্যক্তি ছিদ্দিকে আকবরের প্রশংসা করেনা, সে মুলতঃ আল্লাহ বিদ্বেষী ।

আরো পড়ুন:

ফরজ গোসল নিয়ম | গোসল ফরজ কয়টি | গোসল ফরজ হওয়ার কারণ | গোসল ফরজ সমূহ কি কি?

পাচঁ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত |ফজরের নামাজের ফজিলত

প্রশ্নঃ যারা দরিদ্র, রিক্সা চালায় বা কঠোর পরিশ্রম করে টাকা আয় করে তারা রমজানের রোজা ভঙ্গ করতে পারবে কিনা?

প্রশ্নঃ রোজা অবস্থায় টিকা দেওয়া যাবে কিনা?

রমজানের রোজা ভঙ্গ করতে পারবে কিনা

যে ১৫ আমলে অবিরত রিজিক বাড়ে | সম্পদ লাভের দোয়া

বেলালের মুক্তি

হযরত বেলাল (রাদি আল্লাহু আনহু) ছিলেন একজন হাবশী গোলাম । যখন তিনি মুসলমান হয়ে যান, তখন তাঁর মুনিব উমাইয়া, যে রসূলের বড় দুশমন ও কাফির ছিল, তাঁকে খুবই নির্যাতন করতে লাগলো । ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) এ খবর শুনে অনেক মুখ্যবান স্বর্ণ দিয়ে ক্রয় করে হযরত বেলালকে মুক্ত করে দিলেন।

ছিদ্দিকে আকবরের এ বদান্যতা আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দ হলো এবং কুরআনে পাকে ইরশাদ ফরমান- তিনি কেবল আল্লাহর রেজামন্দির জন্য সম্পদ ব্যয় করেন এবং শীঘ্রই তিনি সন্তুষ্ট হবেন। (কুরআন করীম পারা-৩০ রুকু- ১৮, রুহুল বয়ান ৬৬১ পৃঃ ৪জিঃ)

সবকঃ ছিদ্দিক আকবর (রাদিয়া আল্লাহু আনহু) স্বীয় ধনসম্পদ, সোনা চান্দি সব কিছু ইসলামের জন্য কুরবান করে দিয়েছেন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলাও কুরআন শরীফে তাঁর প্রশংসা করেছেন এবং ইরশাদ করেছেন যে, আমি ওকে সন্তুষ্ট করবো। অতএব যে ছিদ্দিকে আকবরের প্রতি সন্তুষ্ট নয়, আল্লাহও তার উপর সন্তুষ্ট নয় ।

হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব ০২ বেলালের মুক্তি
বেলালের মুক্তি

গযওয়ায়ে তাবুক

গযওয়ায়ে তাবুকের সময় হুযূর (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সাহাবায়ে কিরামকে বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য তৈরী হয়ে যাও। তখন সময়টা ছিল খুবই অভাব অনটনের এবং দুর্ভিক্ষ বিরাজমান ছিল। এমনকি একটি খেজুর দু’জন লোক ভাগ করে খেয়ে জিন্দেগী অতিবাহিত করছিলেন। যুদ্ধস্থল অনেক দূরে ছিল এবং শত্রুও অধিক শক্তিশালী ছিল।

হযরত উসমান (রাদি আল্লাহ আনহু) এ যুদ্ধে বড় সাহসিকতার সাথে সম্পদ ব্যয় করেছিলেন। তিনি দশ হাজার মুজাহেদকে অস্ত্রসস্ত্র দিয়েছেন । তাছাড়া দশ হাজার দিনারের বিনিময়ে সাজ সরঞ্জাম সহ নয়শ উট ও একশ ঘোড়া ক্রয় করে দিয়েছিলেন। অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামও যথেষ্ট খরচ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে সবের আগে হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাদি আল্লাহু আনহু) তাঁর সমুদয় সম্পদ হুযূরের সমীপে পেশ করেন। হযরত ওমর (রাদি আল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, “ঐদিন ঘটনাক্রমে আমার হাতে কিছু সম্পদ মওজুদ ছিল।

আমি মনে মনে স্থির করলাম যে, আজ আমি এতটুকু দান করবো যেন আবু বকর থেকেও অগ্রগামী হয়ে যেতে পারি। অতঃপর আমি আমার সমস্ত সম্পদকে দুভাগ করে এক ভাগ ঘরে রেখে বাকী অংশ হুযূরের খেদমতে নিয়ে আসলাম এবং মনে মনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছিলাম যে আজ আমি অনেক প্রদান করেছি আর আবু বকর থেকে অগ্রগামী হতে পারবো।

কিন্তু দেখলাম যে, হযরত আবুবকর ছিদ্দিক ঘরের সমস্ত মালামাল নিয়ে আগ থেকে হুযূরের খেদমেত হাজির এবং স্বীয় সমস্ত পূঁজি বারগাহে মাহবুবে পেশ করে দিয়েছেন” । হযরত ওমর (রাদি আল্লাহু আনহু) এ অবস্থা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং চিন্তা করতে লাগলেন যে, তাঁর থেকে অগ্রগামী হওয়া অসম্ভব ।

হযরত আবু বকর রাঃ এর ঘটনা রাদিয়াল্লাহু আনহু | ইসলামিক বাস্তব গল্প

হুযূর (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ছিদ্দিকে আকবরের বদান্যতা দেখে ভীষণ খুশী হলেন এবং ফরমালেন, হে ছিদ্দিক! সবকিছু এখানে নিয়ে এসেছ, নাকি ঘরের জন্য কিছু রেখে এসেছ? ছিদ্দিকে আকবরের উত্তর অনেকটা এ রকম ছিলঃ

پروانے کو چراغ توبلبل کو پھول بس
صدیق کے لئے خدا کا رسول بس
অর্থাৎ কীট প্রতঙ্গের জন্য আলোক বর্তিকা, বুলবুল পাখীর জন্য ফুল এবং ছিদ্দিকের জন্য রসূলে খোদা যথেষ্ট ।

অল্প কিছুক্ষণ পর জিব্রাঈল আমীন উপস্থিত হলেন এবং আরয করলেন, ইয়া রসূলল্লাহ! আল্লাহ তাআলা ছিদ্দিকে আকবরকে সালাম দিয়েছেন এবং ছিদ্দিকে আকবরকে জিজ্ঞেস করতে বলেছেন যে তিনি এ অভাব অনটনের অবস্থায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, নাকি অসন্তুষ্ট? হুযূর (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এ পয়গাম যখন ছিদ্দিকে আকবরকে শুনালেন, তখন ছিদ্দিকে আকবর এ পয়গামের আনন্দে আত্ম হারা হয়ে বলতে লাগলেন-

اسخط عن ربي ؟ انا عن ربى راض. انا عن ربى راض، انا عن ربي راض.
অর্থাৎ আমি কি আমার রব থেকে নারাজ হবো? আমি আমার রবের প্রতি রাজি, রাজি, রাজি ।
(কনজুল ঈমান ২৭৫, পৃঃ- তারিখে খোলাফা ৩১ পৃঃ)

সবকঃ ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) সমস্ত সাহাবীগণের মধ্যে অধিক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি আল্লাহর পথে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন। তাঁর এমন শান যে, যে খোদার রেজামন্দির জন্য সমস্ত সৃষ্টিকূল ব্যাকুল, সে খোদা হুযূর (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর বদৌলতে ছিদ্দিকে আকবরের রেজামন্দি কামনা করেন এবং তাঁর কাছে বিশেষ সালাম প্রেরণ করেন । অতএব যে বদবত ছিদ্দিকে আকবরের দুশমন, সে আল্লাহর দুশমন ।

সাহসী ও বাহাদুর

একদিন হযরত আলী (রাদি আল্লাহু আনহু) একটি সমাবেশে দাঁড়িয়ে বললেন, আপনারা কি জানেন, সবলোক থেকে সাহসী ও বাহাদুর কে? সবাই একবাক্যে বললেন, জনাব, আপনি । তিনি বললেন, কক্ষনো নয়, বরং আমার থেকে অধিক সাহসী ও বাহাদুর ছিলেন ছিদ্দিকে আকবর। এটা পরীক্ষিত সত্য।

বদরের যুদ্ধ যখন সম্মূখীন, তখন আমরা হুযূর (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর জন্য একটি আস্তানা তৈরী করেছিলাম এবং ওখানে হয়ূরকে বসায়ে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল যে, হুযূরকে পাহারা ও হেফাজতের জন্য কোন্ ব্যক্তি এখানে দাঁড়াবে, যেন মুর্তি পূজারীদের কেউ হুযূরের কাছে ঘেঁষতে না পারে? আমি কসম করে বলছি, ঐ সময় একমাত্র হযরত আবু বকর ছিদ্দিকই এগিয়ে এসেছিলেন এবং ঐ কথায় সম্মত হয়ে স্বীয় মাথার উপর খোলা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। (নজহাতুল মাজালিস ৩১০ পৃঃ ২জিঃ)

সবকঃ ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) সবচে অধিক দানশীল ছিলেন, আবার সবচে অধিক সাহসীও ছিলেন। হযরত আলী (রাদি আল্লাহু আনহু) স্বয়ং এ কথার সাক্ষ্য দিয়েছেন ।

সাহসী ও বাহাদুর
সাহসী ও বাহাদুর

হযরত ছিদ্দিকে আকবর খেলাফত গ্রহণের পর প্রথম ভাষণ

হযরত ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) খেলাফতের ততে আসীন হওয়ার পর এক সমাবেশে নিন্মের ভাষণটি দান করেন ৷

প্রিয় ভাইয়েরা! খলীফা নির্বাচনের লটারীতে আমার নাম উঠেছে, আমি আপনাদের খলীফা মনোনিত হয়ে গেলাম । অথচ আমি আপনাদের থেকে উত্তম ও আফজল ছিলাম না। কিন্তু আপনাদের নেতা হয়ে গেলাম । তবে আমার নেতৃত্ব বাদশাহ কিসরা, কায়সরের মত নয়।

আমার কথায় বা কাজে কাউকে অন্যায় ভাবে কষ্ট দিতে চাইনা। খুবই মনোযোগ সহকারে শুনুন, আপনাদের মধ্যে যারা শক্তি শালী আমার কাছে ঐ সময় পর্যন্ত দুর্বল, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি ওদের থেকে দুর্বলদের হক আদায় করতে না পারি এবং আপনাদের মধ্যে যারা দুর্বল, ওরা আমার কাছে শক্তিশালী, যদি যথসময়ে আমার সহায়তায় ওদের হক আদায় করা না যায় ।

আর একটি বিষয় স্মরণ রাখবেন, জিহাদ থেকে কখনো অমনোযাগী হবেন না । এ কথা সব সময় স্মরণ রাখবেন, যে জাতি যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসে, সে জাতি পৃথিবীতে ভবঘুরের মত ও অপমানের বোঝা নিয়ে বেঁচে থাকে । ন্যায় এবং ন্যায়ের পথে চলা হচ্ছে আমানত এবং বিপদগামী ও মিথ্যা বলা হচ্ছে খেয়ানত ।

যতক্ষণ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগামী থাকবো, ততক্ষণ আপনাদের উপর আমার আনুগত্য ওয়াজিব এবং যখন আমাকে এর ব্যতিক্রম দেখবেন, তখন বিনা সংকোচে আমার আনুগত্য অস্বীকার করবেন । তখন আমার আনুগত্য আপনাদের উপর ওয়াজিব নয় । আপনাদের অবশ্য কর্তব্য যে আমাকে সোজা রাস্তায় পরিচালনা করা। (তারিখে ইসলাম- ১৩০ পৃঃ)

সবকঃ ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) সর্ব সম্মতিক্রমে মুসলমানদের খলিফা মনোনিত হন । তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সত্য বাণী প্রচার এবং রসূলের আহকাম বাস্তবায়ন। দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। তিনি নিজেকে আল্লাহর রসূরের একজন গোলাম মনে করতেন । তিনি প্রজা সাধারণকে এ ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন যে তাদের খলিফার মধ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আচরণ দেখলে যেন তাঁর আনুগত্য না করে ৷

হযরত ছিদ্দিকে আকবর খেলাফত গ্রহণের পর প্রথম ভাষণ
হযরত ছিদ্দিকে আকবর খেলাফত গ্রহণের পর প্রথম ভাষণ

একান্ত গোপন খাদেম

মদীনার এক প্রান্তে এক অন্ধ বৃদ্ধা বাস করতো, যার আপনজন বলতে কেউ ছিলনা। হযরত ওমর ফারুক (রাদি আল্লাহু আনহু) প্রতি রাতে ওর ঘরে যেতেন ঘরের কাজকর্ম করে দিতেন এবং পানি এনে দিতেন। এক রাতে ওর ঘরে গিয়ে দেখেন যে, ঘরের সমস্ত কাজ অন্য একজন এসে করে গেছেন। এর পরের রাতেও এসে দেখেন যে, সে রাতেও অন্যজন এসে সব কাজ করে গেছেন। এভাবে প্রতিরাতে এসে তিনি দেখেন যে, তাঁর আগে অন্যজন এসে বুড়ীর সব কাজ করে যান ।

তিনি অবাক হয়ে গেলেন, এ কে, যিনি আমার আগে এসে বুড়ীর সব কাজ করে দিয়ে যান? একরাতে তিনি খুবই আগে এসে এ গোপন খাদেমকে দেখার অপেক্ষায় রইলেন। কিছুক্ষণ পর দেখলেন যে, আগমনকারী এসে বুড়ীর কাজ করতে লাগলেন । ফারুকে আযম (রাদি আল্লাহু আনহু) এ গোপন খাদেমকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন । কারণ এ গোপন খাদেম হলেন খলীফাতুল মুসলেমীন হযরত আবুবকর ছিদ্দিক (রাদি আল্লাহু আনহু) । (তারিখে খোলাফা- ৫১পৃঃ)

সবকঃ এত বড় একজন খলিফা হওয়ার পরও জনগণের খেদমত করার অনুপ্রেরণায় এক অন্ধ বৃদ্ধার খেদমত করার জিম্মাদারী নিজে নিয়ে নিলেন । তিনি যে রসূলে খোদা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সত্যিকার খলিফা, এটা তারই নিদর্শন। তিনিই খেলাফতের হকদার ছিলেন। তা নাহলে দুনিয়া পূজারী ও আত্ম অহংকারী শাসকদের মধ্যে এ ধরণের আচরণের কোন নজির আছে কি? মুসলমানদের আমীর মুলতঃ মুসলমানদের খাদেম হয়ে থাকে। ওনার কর্তব্য যে ধনী-গরীব সমস্ত প্রজাদের খবর রাখা এবং সবের কাজে আসা ।”

একান্ত গোপন খাদেম
একান্ত গোপন খাদেম

মাহবুবের বিরহ বেদনায়

হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) এর এরকম হৃদ্য। ছিল যে, হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বেছাল শরীফের পর তিনি মাহবুবের বিরহ বেদনায় একেবারে অস্থির হয়ে পড়েছিলেন এবং অল্প দিনের মধ্যে রোগাক্রান্ত হন। তাঁর চিকিৎসার জন্য একজন ডাক্তার ডাকা হয় । ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর বললেন, এ রোগী কারো প্রতি মহব্বতের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর মাহবুব তাঁর থেকে পৃথক হয়ে গেছেন । এ কারণেই তাঁর এ অসূখ হয়েছে। স্বীয় বন্ধুর দর্শন ছাড়া এর অন্য কোন চিকিৎসা নেই। যে ভাবে হোক, ওনার মাহবুবকে ওনাকে দেখাবার ব্যবস্তা করুন। (সীরাতুস সালেহীন ৯০ পৃঃ)

সবকঃ ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সত্যিকার আশেক ছিলেন ।

ইসলামের বাস্তব কাহিনী | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব ০১ | The incident of Hazrat Abu Bakr

দীদারে মাহবুব

ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) এক রাত্রে স্বপ্ন দেখলেন যে, হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তশরীফ এনেছেন, তাঁর দেহ মুবারকে ছিল দু’টি সাদা কাপড় । কিছুক্ষণ পর সেই সাদা কাপড় দু’টি সবুজ হয়ে গেল এবং এমন ভাবে ঝক ঝক করছিল যে, ওদিকে দৃষ্টিপাত করা যাচ্ছিল না। অতঃপর হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সামনে এগিয়ে এসে হযরত আবু বকরকে ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বললেন, মুসাহেফা করলেন এবং স্বীয় নূরানী হাত হযরত আবু বকরের বুকের উপর রাখলেন, যার ফলে হৃপিন্ড ও বুকের কষ্ট দূরীভূত হয়ে গেল।

এরপর বললেন, হে আবু বকর! এখনও কি আমার সাথে সাক্ষাতের সময় আসেনি? হযরত আবু বকর হুযূরের মুখে এ কথা শুনে এমন ভাবে কান্নাকাটি করেছেন যে, ঘরের সবাই তা শুনেছেন । ক্রন্দনরত অবস্থায় আরয করলেন, واشرفا اليك يا رسول الله, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সাথে আমার সাক্ষাতের সৌভাগ্য কখন হবে? হযরত আবু বকরের ক্রন্দনরত এ আরজি শুনে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমালেন, ভয় করো না, তোমার আমার সাক্ষাতের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ স্বপ্ন দেখার পর হযরত আবু বকর (রাদি আল্লাহু আনহু) খুবই উৎফুল্ল হলেন। (সীরাতুস সালেহীন ৯ ২পৃঃ)

সবকঃ হুযূরের প্রতি ছিদ্দিকে আকবরের এবং ছিদ্দিকে আকবরের প্রতি হুযূরের ভীষণ মহব্বত ছিল ।

Watch Our Video

আমাদের প্রতিদিনের ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

Subscribe to Get Study Online YouTube Channel

35 + English Grammar Quiz All 12 Tenses Mixed test Test your English Get Study Online

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর অছিয়ত

হযরত ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) তাঁর শেষবারের অসুখের সময় হযরত আলী (রাদি আল্লাহু আনহু)কে ডেকে অছিয়ত করলেন, হে আলী! যখন আমার মৃত্যু হবে, তখন তুমি আমাকে তোমার নিজ হস্তে গোসল দিও, কেননা তুমি সেই হস্ত দ্বারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে গোসল করায়েছ। অতঃপর আমার পুরানো কাপড় দ্বারা কাফন পারায়ে সেই হুজরার সামনে নিয়ে রাখিও, যেখানে হুযূরের মাযার রয়েছে। এর পর যদি বিনা চাবিতে তালা এমনিতে খুলে যায়, তাহলে আমাকে ভিতরে দাফন করিও, অন্যথায় সাধারণ মুসলমানদের কবরস্থানে নিয়ে গিয়ে দাফন করিও। (সীরাতুস সালেহীন ৯১ পৃঃ)

সবকঃ ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) যার বিরহে নিজকে উৎসর্গ করে দিচ্ছেন, মৃত্যুর পরও তিনি তাঁর সেই মাহবুবের পাশেই স্থান কামনা করেছেন। – এতে বুঝা যায় যে, ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে মনে প্রাণে ভালবাসতেন এবং তাঁর সত্যিকার আশেক ছিলেন।

আবু ওবাইদার স্বপ্ন

যে সময় সাহাবায়ে কিরামের মুজাহিদ বাহিনী সিরিয়া জয়ে ব্যস্ত ছিল এবং দামেস্ক জয়ের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল কিন্তু দামেস্ক বিজয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছিল, এবং সাহাবায়ে কিরামের মনে এক প্রকার উৎকণ্ঠার ভাব সৃষ্টি হয়েছিল, ঠিক সে নৈরাজ্যের সময় হযরত আবু ওবাইদা (রাদি আল্লাহু আনহু) স্বপ্ন দেখলেন যে, তাঁর তাবুতে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তশরীফ এনেছেন এবং আবু ওবাইদাকে সুসংবাদ দিলেন, হে আবু ওবাইদা! মুসলমানদেরকে বলে দাও, আজ এ স্থান জয় হয়ে যাবে, তোমরা আশ্বস্থ থেকো-এ বলে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাড়াতাড়ি ফিরে যাবার মনস্থ করলেন।

হযরত আবু ওবাইদা আর করলেন, ইয়া রাসুলল্লাহ! এ সময় হুযূরের এত তাড়াতাড়ি কিসের? ফরমালেন, হে আবু ওবাইদা! আজ আবু বকরের ওফাত হয়েছে। আমি ওর জানাযার প্রস্তুতি বাদ দিয়ে এখানে এসেছি, এক্ষনি তথায় যেতে হবে। এ বলে হযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চলে গেলেন । (সীরাতুস সালেহীন ৯৩ পৃঃ)

সবকঃ ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) এর সাথে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর এক বিশেষ সম্পর্ক ছিল। এখানেও এবং ওখানেও ছিদ্দিকে আকবরের উপর হুযূরের বিশেষ রহমতের দৃষ্টি রয়েছে।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর জানাযা

হযরত ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) তাঁর ইন্তেকালের আগে হযরত আলী (রাদি আল্লাহু আনহু)কে বলে দিয়েছিলেন যে, তাঁর জানাযা তৈরী করে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রওজা পাকের সামনে রেখে যেন এভাবে আরয করা হয়, আস্সালামু আলাইকা ইয়া রসূলল্লাহ! আবু বকর আপনার দরজায় উপস্থিত। এর পর যে রকম হুকুম হয় সে রকম যেন করা হয়।

অতএব তাঁর অছিয়ত মুতাবেক তাঁর জানাযা হুজরার সামনে রেখে আরয করা হলো- ইয়া রসূলল্লাহ! আপনার গুহার সাথী আবু বকর আপনার দরজায় উপস্থিত, তাঁর একান্ত বাসনা যে, আপনার হুজরায় সমাধিত হওয়া। যদি অনুমতি পাওয়া যায়, তাহলে হুজরা শরীফে দাফন করা যেতে পারে। এটা শুনে হুজরা শরীফের দরজা যেটা বন্ধ ছিল, এমনিতে খুলে গেল এবং আওয়াজ আসলো-

أدْخِلُوا الحبيب إلى الحبيب فَإِنَّ الجنيب إلى الحبيب مشتاق الْحَنِيْبَ مُشْتَاقُ

অর্থাৎ বন্ধুকে বন্ধুর সাথে মিলায়ে দাও। কেননা বন্ধু বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের জন্য ললায়িত। যখন হুজরা শরীফে হযরত আবু বকর (রাদি আল্লাহু আনহু) কে দাফন করার অনুমতি পাওয়া গেল, তখন জানাযা ভিতরে নিয়ে গেলেন, এবং হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাঁধ মুবারকের কাছাকাছি দাফন করে দিলেন। (সীরাতুস সালেহীন ৯৬ পৃঃ)

সবকঃ হযরত ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) এর উচ্চ শান-মান এ কথার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনিই গুহায় দু’জনের অন্যতম ছিলেন এবং মাযারে দু’জনের অন্যতম হলেন। নবীগণের পর ছিদ্দিকে আকবর (রাদি আল্লাহু আনহু) হলেন অদ্বিতীয় ।

হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)

হযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন আল্লাহ তাআলার কাছে- প্ৰাৰ্থনা করলেন- হে আল্লাহ! ওমর বিন খাত্তাবের অস্তিত্ব দ্বারা ইসলামকে ইজ্জত দান কর ৷ হুযূরের দুআ কি কবুল না হয়ে থাকতে পারে। এদিকে হুযূর দুআ করছেন, অন্যদিকে হযরত ওমর (রাদি আল্লাহু আনহু) হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলেন। রাস্তায় তাঁর সাথে এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ হলে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ওমর, তুমি কোথায় যাচ্ছ? তিনি বললেন, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে কতল করার জন্য যাচ্ছি।

লোকটি বললেন, ভাল কথা, তবে এ রকম করলে বণী হাশেম থেকে কি নিরাপদ থাকা যাবে? আর নিজের ঘরের খবর কিছু রাখ কি? তোমার বোন ফাতিমা ও তোমার ভগ্নিপতি সাঈদ বিন যায়েদওতো মুসলমান হয়ে গেছে। হযরত ওমর (রাদি আল্লাহু আনহু) এ খবর শুনে রাগে থর থর করে কাঁপতে লাগলেন এবং বললেন, ঠিক আছে, প্রথমে ওদেরকে শায়েস্তা করি- এ বলে তিনি বোনের ঘরের দিকে গেলেন এবং কিছুক্ষণ ঘরের বাইরে অবস্থান করলেন, এ সময় তিনি বোনের কণ্ঠস্বর শুনলেন।

ইসলামের বাস্তব কাহিনী | ইসলামিক বাস্তব গল্প পর্ব ০১ | The incident of Hazrat Abu Bakr

অতপর অতর্কিত ভাবে ঘরে প্রবেশ করে বোনকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মুখে কিসের আওয়াজ শুনলাম? বোনের মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছিল না। ঐ সময় ওমরের বোন ও ভগ্নিপতিকে এক সাহাবী সূরা তোয়াহা পড়াচ্ছিলেন, হযরত ওমরের আভাস পেয়ে ওনাকে ঘরের এক কিনারে লুকায়ে রাখলেন এবং ওমরের ভগ্নিপতি হযরত সাঈদ সাহস করে ওমরের সামনে গিয়ে বললেন, ভাইজান! আচ্ছা, আমরা যদি হকের উপর থাকি, তবুও কি আপনি আমাদেরকে রাপ মনে করবেন? এ কথা শুনে হযরত ওমরের রাগ আরও বৃদ্ধি পেল।

তিনি তাঁর ভগ্নিপতিকে জোরে ধাক্কা দিলেন এবং দু চারটি ঘুষি মেরে দিলেন। স্বামীর এ অবস্থা দেখে হযরত ওমরের বোন ফাতিমা অস্থির হয়ে দৌড়ে গেলেন এবং স্বামীকে ভাই থেকে আলাদা করলেন। কিন্তু হযরত ওমর ওকেও ছাড়লেন না। ওকেও মেরে রক্তরঞ্জিত করে দিলেন। রাগ স্তমিত হওয়ার পর বোনকে ডেকে বললেন, যেটা তোমরা পড়ছিলে, সেটা আমাকে দেখাও। হযরত ফাতেমা বললেন, ভাই, ওটা কেবল পবিত্র লোকেরাই স্পর্শ করতে পারে, প্রথমে আপনি পবিত্র হয়ে নিন। হযরত ওমর বোনের বাতলানো পদ্ধতি মুতাবেক অযু করলেন এবং সেই পুস্তিকাটা হাতে নিলেন এবং পড়তে লাগলেন-

طه مَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ لِتَشْقى الَّا تَزْكِرَةً لِمَنْ يَخْشَى إنَّنِى أَنَا اللهُ لَا إِلَهَ إِلا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلوةَ لِذِكْرِى
পর্যন্ত পড়ার পর তাঁর অন্তরে এমন ভাবাবেগ সৃষ্টি হলো যে তিনি অশ্রুসজল নয়নে বলতে লাগলেন, আমাকে এক্ষুনি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট নিয়ে চল । হযরত ওমরের মুখে একথা শুনে সেই সাহাবী যিনি হযরত ওমরে বোন ও ভগ্নিপতিকে কুরআন শিক্ষা দিচ্ছিলেন, ভীষণ আনন্দিত হলেন এবং লুকানো অবস্থা থেকে বের হয়ে এসে বললেন, ওমর, তোমার প্রতি শুভ সংবাদ, আমি রসুলে খোদা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে আল্লাহ তাআলার দরবারে এ ভাবে দুআ করতে শুনেছি, হে আল্লাহ! ওমর বিন খাত্তাবের দ্বারা ইসলামকে ইজ্জত দান কর।

এর পর হযরত ওমর (রাদি আল্লাহু আনহু) হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সমীপে উপস্থিত হওয়ার জন্য রওয়ানা দিলেন। কাছে গিয়ে দেখেন, হযরত হামজা (রাদি আল্লাহু আনহু) সহ আরো কয়েক জন লোক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। লোকেরা হযরত ওমরকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন এবং ওনার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গেলেন। হযরত হামজা (রাদি আল্লাহু আনহু) বললেন, আল্লাহ তাআলা যদি ওমরের কল্যাণ কামনা করেন, তাহলে ওকে ইসলামের বদৌলতে হেদায়েত করবেন আর যদি অন্য কিছু কামনা করেন, তাহলে ওমরকে হত্যা করাটা আমাদের জন্য কোন কঠিন কাজ নয়।

এদিকে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে হযরত ওমরের আগমণ বার্তা পৌঁছার সাথে সাথে তিনি ঘর থেকে বের হলেন এবং ওমরের কাপড় টেনে ধরে বললেন, ওমর! তুমি কি এখনো বিরত হবে না? পুনরায় হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেই দুআটি উচ্চারণ করলেন, “হে আল্লাহ! ওমর বিন খাত্তাবের অস্তিত্ব দ্বারা ইসলামের ইজ্জত দান কর’ । হুযূরের পবিত্র মুখ থেকে এ শব্দগুলো যখনই বের হলো, হযরত ওমর তখন জোর গলায় বলে উঠলেন-
اَشْهَدُ أَنْ لا إله إلا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّكَ رَسُوْلُ الله .
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রসূল ।
(তারীখুল খোলাফা ৭৯ পৃঃ নজহাতুল মাজালেস ৩১৩ পৃঃ ২জিঃ)

সবকঃ সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম (রাদি আল্লাহু আনহুম) অনেক উচ্চ শান-মানের অধিকারী। কিন্তু হযরত ওমর (রাদি আল্লাহু আনহু) এর এটা একটা আলাদা শান যে, হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত ওমরকে আল্লাহ থেকে চেয়ে নিয়েছেন। যে জিনিসটা একান্ত কামনা করে অর্জন করা হয়, সেটা খুবই প্রিয় হয়ে থাকে । তাই যারা হযরত ওমর (রাদি আল্লাহ আনহু) এর বিরোধী, ওরা মুলতঃ হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মর্জির বিরোধী।

Advertisements

3 COMMENTS

Leave a Reply